বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্যার পানি কমলেও ভয়াবহ নদীভাঙন

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যার পানি কমলেও ভয়াবহ নদীভাঙন

কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে অনেক এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তিস্তার পানি আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ ছাড়া বন্যায় কুড়িগ্রামের ৬৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। টাঙ্গাইলে যমুনায় পানি কমলেও দুর্ভোগ কাটেনি চরাঞ্চলবাসীর। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

রংপুর : উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি একাধিকবার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এর পরও তিস্তার পানি পুনরায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি বলেন, বন্যায় তার ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছিলেন। নদী ভাঙনের আশঙ্কায় ২০টি পরিবার তাদের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এদিকে পানির স্রোতে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের শান্ত বাজারের কাছের রাস্তার কালভার্ট ভেঙে ১০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পাউবো সূত্রে জানা গেছে,  গতকাল তিস্তা নদীর পানি সমতল ডালিয়া পয়েন্টে  হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার  ৫৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার উজানে ভারী বৃষ্টি হয়নি। তবে দেশের উজানে তিস্তা নদীর দোমহানী ও গজলডোবা পয়েন্টের পানি দ্রুত বাড়ছে। গত ১২ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল দোমহানী পয়েন্টে ৫০ সে.মি. ও গজলডোবা পয়েন্টে ৮৫ সে.মি. বেড়েছে। এর ফলে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিকাল নাগাদ বেড়েছে। মধ্য রাতে স্বল্প সময়ের জন্য বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

কুড়িগ্রাম : জেলার সব নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। উজানের পানি কমলেও ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বানভাসিদের এখনো দুর্ভোগ কমেনি। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন টিম শুরু থেকে এসব মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষা দিচ্ছে। এদিকে, এবারের বন্যায় বিভিন্ন পুকুরে থাকা প্রায় ১৩০ মেট্রিক টন পোনা মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৬০০ মৎস্য চাষি। ৬৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব মৎসজীবিরা। অন্যদিকে জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির পাটখেত, বিভিন্ন সবজি, আমন বীজতলা ও অন্যান্য ফসল।

টাঙ্গাইল : মাসখানেক ধরে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীতে পানি বাড়লেও এখন তা কমতে শুরু করছে। তবে যমুনার অন্যান্য শাখা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানি কমলেও চরাঞ্চলবাসীর দুর্ভোগ কমেনি। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইল জেলা পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা পাউবো সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি মধুপুর পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, কাউলজানী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার ও ফটিকজানি নদীর পানি নলচাপা পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নদীর পানি বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা চরাঞ্চল এলাকার বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন সরকার জানান, যমুনা নদীর পানি গত দুই দিন ধরে কমতে শুরু করলেও এখনো চরাঞ্চলের ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। পচে নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। যার ফলে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কাটেনি চরাঞ্চলবাসীর। টাঙ্গাইল জেলা পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরুল আমিন জানান, সোমবার থেকে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করছে। দুই দিনে পানি কমে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার অন্যান্য নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর