বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

মা ও নবজাতককে নৃশংসভাবে হত্যা

সন্তানের স্বীকৃতি চাওয়াই ছিল অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৈশাচিক বর্বরতাকেও যেন হার মানিয়েছে। সন্তানের স্বীকৃতি চাওয়ার অপরাধে গর্ভবতী মাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক কন্যাশিশুকেও পৃথিবীর আলো দেখতে দেননি এক পাষ-। এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি। হত্যার শিকার হতভাগা সেই সান্ত্বনা বেগমকে (৩০) খুঁজে বের করার কথা বলে তার পরিবারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন মাসুদ মিয়া (৩৫) নামের সেই ব্যক্তি। তবে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের দুই দিনের মধ্যেই এর রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব-১-এর একটি দল সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুর থেকে মাসুদকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গার্মেন্টে চাকরির সুবাদে মাসুদ মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় সান্ত্বনা বেগমের। বিয়ের আশ্বাসে সান্ত্বনার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন মাসুদ। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সান্ত্বনা। এরপর কন্যাসন্তানও জন্ম দেন। তবে পিতৃপরিচয় দাবি করাই ছিল ওই হতভাগা নারীর অপরাধ।

কমান্ডার মঈন বলেন, ১৫ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ থানার খালাশপীর এলাকায় আখখেতের ভিতর থেকে অজ্ঞাত এক নারী (৩০) ও নবজাতক কন্যাশিশুর লাশ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ঘটনায় পীরগঞ্জ থানা-পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করে। হত্যার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে গাজীপুরের গাছা থানার তারগাছ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টে অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন তিনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই গার্মেন্টে চাকরি নেন সান্ত্বনা। চাকরির সুবাদে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেফতার মাসুদের তথ্যমতে, অন্য একজনের সঙ্গে সান্ত্বনার বিয়ে হয়েছিল। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মাসুদ ও সান্ত্বনা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী অন্তঃসত্ত্বা হন। এরপর মাসুদকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য চাপ দেন সান্ত্বনা। এতে তাদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হয়। পরে বাড়িতে সমস্যা হয়েছে বলে সান্ত্বনাকে ঢাকায় রেখে গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে চলে যান মাসুদ। মাসুদের আগের বিয়ের বিষয়ে জানতেন না সান্ত্বনা। কমান্ডার মঈন বলেন, ১২ জুলাই মাসুদের সন্ধানে তার গ্রামের বাড়ি রংপুরে যান সান্ত্বনা। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন মাসুদ বিবাহিত এবং তার সন্তান রয়েছে। সেখানে সান্ত্বনা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বীকৃতি এবং তাকে বিয়ের জন্য মাসুদকে চাপ প্রয়োগ করেন। মাসুদের প্রথম স্ত্রী এতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সান্ত্বনাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন মাসুদ। ঢাকায় গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে আগের মতো বসবাস শুরু করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। ১৩ জুলাই সান্ত্বনাকে মাসুদের খালা পীরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে গাড়িতে উঠিয়ে দেন। সান্ত্বনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ফিরে আসতে বলেন মাসুদ। গাড়ি থেকে নেমে মাসুদের বাড়ি যাচ্ছিলেন সান্ত্বনা। খালাশপীর নামক স্থানে পৌঁছলে একটি আখখেতের ভিতর সান্ত্বনাকে নিয়ে যান মাসুদ। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পেছন থেকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সান্ত্বনাকে হত্যা করেন মাসুদ। এরপর সান্ত্বনার গলা ও পেটে আঘাত করেন তিনি। একপর্যায়ে কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয় এবং মারা যায়। তিনি বলেন, আসামিকে পীরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করবে র‌্যাব।

সর্বশেষ খবর