বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে ছড়াছড়ি বিএনপি জাপায় একক

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

আওয়ামী লীগে ছড়াছড়ি বিএনপি জাপায় একক

খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে খুলনা-১ আসন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান, ১৯৯৬ সালে বিএনপির প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাকি আটবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখানে নির্বাচন করে জয়ী হন। এবারের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের চারবারের সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকায় দলীয় মনোনয়ন চেয়ে একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। নৌকা প্রতীক পেলেই নিশ্চিত বিজয়, এ কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ।

বিপরীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থী আলোচনায় রয়েছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর দ্বন্দ্ব বিভেদকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপির প্রার্থী। 

ইতোমধ্যেই নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে দক্ষিণের এই জনপদে। খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন, জাতীয় সংসদের হুইপ ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, (বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড)  বিসিবির পরিচালক বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল, সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়, দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন, বটিয়াঘাটা আওয়ামী লীগ সভাপতি আশরাফুল আলম খান ও  চালনা পৌরসভার সাবেক মেয়র অচিন্ত কুমার ম ল। এ ছাড়া বিএনপির আমীর এজাজ খান, জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়, ইসলামী আন্দোলনের আবু সাঈদ ও সিপিবির জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অশোক কুমার সরকার প্রার্থী হতে পারেন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ। ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এ আসনে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেন তিনি। পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, এবারও আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। সেভাবে দলীয় ও সামাজিক কর্মকাে ও অংশ নিচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। আমি ২০ বছর এই এলাকার সংসদ সদস্য। এলাকায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নির্বাচিত হলে আগামীতে নদী খননসহ আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হন ননীগোপাল মন্ডল। পরে ২০১৪ সালে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও পরাজিত হন। ননীগোপাল মন্ডল বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষ সংসদ সদস্য হিসেবে আমাকেই দেখতে চায়। আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি এবার মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন তরুণরাও। জেলা আওয়ামী লীগে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল জানান, প্রধানমন্ত্রী তরুণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। তরুণদের নেতৃত্বে সুযোগ দেওয়া হলে বঙ্গবন্ধু ও নেত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় জানান, সারা দেশ যেভাবে উন্নয়নে এগিয়েছে সেখানে এই আসনটিতে গতানুগতিক কিছু কাজ হয়েছে। এই বিষয়ে বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা ‘ডায়নামিক’ ভূমিকা নিতে পারেনি। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য দীর্ঘদিন অসুস্থতায় পার্লামেন্টেও যেতে পারেননি। সেই সময় দলের সিনিয়র নেতারা আমাকে এই আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। সেভাবেই সবার সঙ্গে আলোচনা ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। অন্যদিকে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে পরাজিত হলেও মাঠ ছাড়েনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান। ২০০১ সালে নির্বাচনে তিনি ৪৭ হাজার ৫২৩ ভোট ও ২০০৮ সালে ৬৮ হাজার ৪২০ ভোট পান। আমির এজাজ বলেন, এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি। তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ও দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আমি জয়লাভ করব। এ ছাড়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮২ হাজার ৪৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৭ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৬ জন।

সর্বশেষ খবর