বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্ধ হওয়ার পথে ঢাকা নগর পরিবহন

হাসান ইমন

বন্ধ হওয়ার পথে ঢাকা নগর পরিবহন

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাস রুট রেশনালাইজেশন বিষয়ে ১০ সদস্যের কমিটি করে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ওই কমিটি এরই মধ্যে ২৭টি সভা করেছে। এত সভার মধ্যে কমিটি পরিকল্পিত ৪২টি রুটের মধ্যে মাত্র তিনটি চালু করতে সক্ষম হয়েছে। তাও আবার একটি রুটে ট্রান্স সিলভা পরিবহন সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আরেকটি রুটে অভি মোটরস (হানিফ পরিবহন) বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। অন্য আরেকটি রুটে বিআরটিসি কোনোমতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালু হওয়া তিন রুটে পরিবহনের বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী অবৈধ বাসের দৌরাত্ম্য। একই সঙ্গে সিন্ডিকেটের কারণে বাস রুট রেশনালাইজেশন শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি প্রথম ২১ নম্বর রুট চালু করে। এর যাত্রাপথ ছিল ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত। ১০০ বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৫০টি দিয়ে শুরু করা হয়। এর মধ্যে বিআরটিসির ৩০টি ডাবল ডেকার এবং ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি বাস কিছুদিনের মধ্যে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও আর হয়নি। সব শেষ ১ এপ্রিল থেকে এ রুটে ট্রান্স সিলভা পরিবহন সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এ রুটে বিআরটিসির কিছু বাস চললেও উপযুক্ত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

অন্যদিকে ঢাকা নগর পরিবহনের ২২ নম্বর রুটে (ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-ফার্মগেট-শাহবাগ-কাকরাইল-ফকিরাপুল-মতিঝিল-কাজলার পাড়-ডেমরা) চলে হানিফ পরিবহনের বাস। এ রুটে তাদের ৫০টি বাস চলার কথা থাকলেও শুরু হয়েছিল ৩০টি বাস দিয়ে। তা না বেড়ে উল্টো কমে দাঁড়িয়েছে ১০-১২টিতে। শুরুতে টিকিট কাউন্টার থাকলেও পরে এর অনেকটিই উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাস কমে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। এ ছাড়া হানিফ পরিবহনের বাসগুলো এখন রাস্তার যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলে। অন্য দুই রুটে কাউন্টার থাকলেও এ রুটের কাউন্টার উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা এখন লোকাল বাসের মতো যাত্রী নিচ্ছে। অনেক কন্ডাক্টর টিকিটও দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভি মোটরসের মালিক প্রতিনিধি মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরাও একমত। এজন্য আমরা ২২ নম্বর রুটে পরিবহন সেবা চালু করেছি। কিন্তু এ রুট চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই আমাদের ২০-৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমরা আর পারছি না। নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করার পরও তারা এ রুট থেকে অবৈধ বাস সরাতে পারছে না। বিভিন্ন সময় অভিযানের নামে কয়েকটি বাস ডাম্পিং করে তারা। কিছুদিন পর আবার এসব বাস সড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। এসব কারণে আমাদের বাসগুলো যাত্রী পায় না। ফলে লোকসান গুনতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের বাসসংখ্যা কমিয়ে ১০-১৫টিতে আনা হয়েছে। কারণ বিভিন্ন সময় বাস রুট কমিটির কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। এখন যেহেতু দক্ষিণের মেয়র দেশের বাইরে, তিনি এলে সমস্যাগুলো তার কাছে উপস্থাপন করব। মেয়র মহোদয় সমাধান দিলে ভালো হবে। আর না হয় আমরা এ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হব।’ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাস রুট বাস্তবায়নের পথে প্রথম অন্তরায় রুটে চলা অবৈধ বাস। একই সঙ্গে এসব অবৈধ পরিবহন মালিকদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না। একই অভিযোগ চালু হওয়া ২৬ নম্বর রুটেও। এ রুটে ৫০টি বাস দিয়ে বিআরটিসি চালু হওয়ার কথা থাকলেও ৩০টি দিয়ে শুরু হয়। তা এখন কমে ২০-২২টিতে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর ২৩, ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ নম্বর রুটে বাস চালু করার কথা রয়েছে। এজন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিটিসিএ।

এ বিষয়ে ডিটিসিএ’র ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘২১ নম্বর রুটে ট্রান্স সিলভা বন্ধ হয়ে গেলেও আমরা বিআরটিসি দিয়ে রুট চালু রাখছি। একই সঙ্গে ২৬ নম্বর রুটেও বিআরটিসি চলছে। ২২ নম্বর রুটে হানিফ পরিবহন চলছে। তবে তারা কয়েকটি বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। দক্ষিণের মেয়র দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের বিষয়ে বসা সম্ভব হচ্ছে না। মেয়র এলে সব বিষয় নিয়ে বসা হবে। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর