বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জেপি নেতা সালাম খুনের নেপথ্যে অন্য কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্ধেকের কম বয়সী নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে খুন হলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সালাম বাহাদুর ওরফে আবদুস সালাম মিয়া (৬০)। গত মঙ্গলবার এ ঘটনায় অভিযুক্ত কামরুন্নাহার চাঁদনী ও তার মা মমতা বেগমকে গ্রেফতার করেছে শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ। গতকাল রাজধানীর শ্যামলীতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, শনিবার রাত ১১টার পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের জরুরি বিভাগের ফটকে একজন বয়স্ক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং মৃতদেহের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখতে পায়। পরে ওই ব্যক্তির নাম সালাম বাহাদুর ওরফে আবদুস সালাম মিয়া বলে জানতে পারে পুলিশ। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার।

তিনি বলেন, লাশটি কে বা কারা জরুরি বিভাগের সামনে রেখে গেছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও আশপাশ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার প্রায় সব অকার্যকর থাকায় ঘটনার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মৃতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার পরিবারকে জানানো হলে তারা হত্যাকান্ডের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানাতে পারেননি। রবিবার নিহতের ছোট ভাই আবদুল করিম খলিফা বাদী হয়ে শেরেবাংলানগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পারায় রহস্য উদঘাটনে কিছুটা বেগ পেতে হয় পুলিশকে। বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় রহস্য উদঘাটন করা হয়। এরপর মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গাজিন্দা থেকে অভিযুক্ত মেয়ে ও তার মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতার মা ও মেয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে সালামের সঙ্গে ওই মেয়ের পরিচয় হয়। পরে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে সালামের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। কিছুদিনের মধ্যে মেয়েটি বুঝতে পারেন সালাম তাকে চাকরি দিতে পারবেন না। এ বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানাজানি হলে এ সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন মেয়েটি। কিন্তু সালাম তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও আত্মীয়স্বজনের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মেয়েটি কোনো উপায় না পেয়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পূর্ব কথোপকথনের জেরে শনিবার বিকাল ৩টার দিকে সালাম মেয়েটির বাড়িতে যান। একপর্যায়ে মেয়ের মা ও সালামের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তাদের কথা শুনে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসে। ঘটনাস্থলে এসে তারা মা ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সালামকে বেধড়ক মারধর করে। সালামের আসার বিষয়টি মা-মেয়ে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন আগেই জানতে পারেন। তারা সালামকে মারধর করে গুরুতর আহত করে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখেন। মূলত তারা আহত সালামকে আটকে রেখে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালান। তারা বিষয়টি ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। যেহেতু তার বয়স বেশি তাই নানা শারীরিক সমস্যা ও মারধরে বেশি রক্তক্ষরণ হওয়ায় শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে আনার পথে সালামের মৃত্যু হয়। মাঝপথে মেয়েটি গাড়ি থেকে নেমে যান এবং তার মা সালামকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে জরুরি বিভাগের প্রবেশপথে ফেলে রেখে চলে যান। এদিকে জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সালামের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার মা ও মেয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলানগর থানার এসআই আকতারুজ্জামান আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত মা ও মেয়ে প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিরা হলেন মমতা বেগম ও মেয়ে কামরুন্নাহার চাঁদনী। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

সর্বশেষ খবর