শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আফ্রিকার বাজারে চোখ

রপ্তানির তুলনায় আমদানি ১০ গুণ, অতিরিক্ত শুল্ক প্রধান বাধা, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন বাণিজ্যে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আফ্রিকার বাজারে চোখ

‘আফ্রিকা মহাদেশের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্যের যেমন বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের বাজারেও আফ্রিকার বাণিজ্য করার সমান সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এ সম্ভাবনার বিষয়টি উভয় পক্ষের কাছে এখন পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেল।’ ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে একটি অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহায়তা বিষয়ক মন্ত্রী নালেডি প্যান্ডর। এরপর পেরিয়ে গেছে আরও দুই বছর। এখন এ অজানা বাণিজ্যকে জানার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আফ্রিকার দেশগুলোয় বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ট্যারিফ কমিশনের কাছে চাওয়া হয়েছে বিশদ প্রতিবেদন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে রপ্তানি খাতে। তখন উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা আর পাওয়া যাবে না। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের নতুন বাজারে পণ্য নিয়ে যেতে হবে। সে উদ্দেশ্যেই আফ্রিকার দেশগুলোয় বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, আফ্রিকায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। ওই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। সাম্প্রতিক তথ্য নিয়ে ট্যারিফ কমিশন বলছে, আফ্রিকার ৩২টি দেশে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৪২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপরীতে ওই দেশগুলো থেকে আমদানির পরিমাণ ১০ গুণের বেশি, যা প্রায় ৪ হাজার ২৯৬ মিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, আফ্রিকায় বাংলাদেশের মোট রপ্তানির এক-চতুর্থাংশের বেশি দক্ষিণ আফ্রিকায়, যার পরিমাণ প্রায় ১৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় আসে মিসর থেকে। তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে মরক্কো থেকে, যার পরিমাণ প্রায় ৩৬ মিলিয়ন ডলার। আফ্রিকার এ তিন দেশ থেকে মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেকের বেশি আসে। বাকি ২৯ দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি নামকাওয়াস্তে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আফ্রিকায় রপ্তানি বৃদ্ধির যে চ্যালেঞ্জগুলো উঠে এসেছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে, সেগুলো পরিপূর্ণ নয়। প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্যে উচ্চ শুল্কহার এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে কমিশন। আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা যায় সেই সম্ভাবনা তুলে ধরে একটি বিশদ প্রতিবেদন দিতে বলেছি ট্যারিফ কমিশনকে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রপ্তানি গন্তব্য দক্ষিণ আফ্রিকার গড় ট্যারিফ হার ৭ দশমিক ৮ এবং তৈরি পোশাকের ওপর শুল্ক ৪১ দশমিক ১০ শতাংশ; মিসরে সব পণ্যের গড় ট্যারিফ ১৮ দশমিক ৯, তৈরি পোশাকে ৩৭ দশমিক ১৩ শতাংশ; মরক্কোয় সব পণ্যের গড় ট্যারিফ ১৪ দশমিক ২ এবং তৈরি পোশাকে ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর আফ্রিকার দেশগুলোর শুল্কহার বেশি থাকলেও অন্যান্য পণ্যের শুল্কহার কম। সে কারণে গড় ট্যারিফও কম। তপনকান্তি ঘোষ বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ কম। কারণ ওই অঞ্চলের সব দেশই কোনো না কোনো অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সদস্য। এ ছাড়া ওই অঞ্চলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক বেশি। তবে এর বাইরে ওষুধ, কাগজ বা কাগজজাতীয় পণ্য, সিমেন্ট, কৃষিপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাতীয় পণ্য, হালকা প্রকৌশল, আইটিসহ আমাদের আরও অনেক পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এসব পণ্য আফ্রিকার বাজারে রপ্তানি করা গেলে একদিকে তৈরি পোশাকের ওপর আমাদের নির্ভরতা হ্রাস পাবে; রপ্তানিতে বৈচিত্র্যও আসবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর