শিরোনাম
শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আমদানি ব্যয় ৩১ শতাংশ কমেছে এক বছরে

শাহেদ আলী ইরশাদ

ডলার সংকট ও ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়ির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪২৭ কোটি ডলার। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি নেমে এসেছে ৬ হাজার ৫৯২ কোটি ডলারে। এক বছরের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় কমেছে ২ হাজার ৮৩৫ কোটি ডলার। ডলার সাশ্রয়ে বিলাসীসহ অনেক পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ডলারের ওপর চাপও কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আমদানি মূল্য পরীক্ষা করায় দাম বেশি দেখিয়ে ঋণপত্র খুলে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থপাচার বন্ধ হচ্ছে। ফলে আমদানির পরিমাণ ঠিক থাকলেও কমেছে ব্যয়।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমে বলেছেন, গত বছর যেহেতু আমাদের আমদানিতে বিধিনিষেধ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক খুব কঠোরভাবে মনিটরিং করে আমদানির ঋণপত্র খোলার অনুমোদন দিয়েছে। চলতি অর্থবছরও বাংলাদেশ ব্যাংক ওই নীতি অনুসরণ করবে। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে কিছু মাইলস্টোন আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৭২ কোটি ডলারের ভোগ্যপণ্য আমদানি হলেও গত অর্থবছরের ১১ মাসে আমদানি হয়েছে ৭১৪ কোটি ডলারের। একই সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণ খোলার পরিমাণ কমেছে ৫৫ শতাংশের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯৯ কোটি ডলারের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে আমদানি হয়েছে ২৬৯ কোটি ডলারের। মধ্যবর্তী (যেসব উৎপাদিত দ্রব্য সরাসরি ভোগের জন্য ব্যবহার না করে উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়) পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৫২৬ কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬৯৫ কোটি ডলার। আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার কমেছে ৩০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ২১১ কোটি ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৩০৩ কোটি ডলারের। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, অর্ডার কমে যাওয়ার কারণে আমরা কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণ খোলা কমিয়ে দিয়েছি। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার কারণে নতুন করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে যে পরিমাণ পণ্য আনতে সাড়ে ৮০০ কোটি ডলার খরচ হতো, এখন তা ৫৫০ কোটি ডলার খরচেই আনা যাচ্ছে। আমদানি পণ্যের মূল্য পরীক্ষা করায় এখন কেউ বেশি দাম দিয়ে পণ্য আনতে পারছেন না। এখন রপ্তানি পণ্যের মূল্যও পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক কিছুদিন আগে সাংবাদিকদের বলেছেন, হুন্ডির চাহিদা কমাতে বেশি বা কম দামে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করা হচ্ছে। এটা অনেকটা সফল হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে বিআইডিএসের বার্ষিক সম্মেলনে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থ পাচারের তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, বেশি দামের পণ্য কম দামে এলসি খুলে বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১ লাখ ডলারের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি মাত্র ২০ হাজার ডলারে আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েস (আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেখানো) হয়েছে। গত জুলাই মাসে এমন আশ্চর্যজনক প্রায় ১০০টি ঋণপত্র বন্ধ করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং’ বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

সর্বশেষ খবর