শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জন্মদিনেই জাদুঘরে কাঙাল হরিনাথের সেই এমএন প্রেস

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

জন্মদিনেই জাদুঘরে কাঙাল হরিনাথের সেই এমএন প্রেস

গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ১৯০তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে তাঁর ব্যবহৃত ও দেশের প্রথম ঐতিহাসিক সেই এমএন ছাপাখানাটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ছাপাখানাটি ফিতা কেটে ও ঢাকনার কাপড় সরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। জাদুঘরের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ওবাইদুল্লার সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাঙাল হরিনাথের চতুর্থ বংশধরের স্ত্রী শ্রীমতী গীতা মজুমদার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাছুম মুর্শেদ শান্ত, রানা টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা, সাংবাদিক কে এম আর শাহিন প্রমুখ। জানা গেছে, গত শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের নবনির্মিত বোর্ড সভা কক্ষে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ঐতিহাসিক সেই এমএন প্রেসটি বাস্তুভিটা থেকে জাদুঘরে হস্তান্তরের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিনামা স্বাক্ষর হয়। ২০ লাখ টাকার চেক ও দুজনের চাকরির বিনিময়ে ছাপাখানাটি হস্তান্তরের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন কাঙাল হরিনাথের চতুর্থ বংশধরের স্ত্রী শ্রীমতী গীতা মজুমদার ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। চুক্তিনামা সম্পাদনের তিন দিন পর গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ব্যবহৃত ঐতিহাসিক এমএন ছাপাখানাটি কয়েকটি খন্ড আকারে গত মঙ্গলবার জাদুঘর নিয়ে আসা হয়। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার দেশের গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তিনি ছিলেন একজন প্রজাবান্ধব ও প্রতিবাদী মানুষ। তাঁর ছাপাখানাটি একটি ঐতিহাসিক ও দালিলিক মুদ্রণ যন্ত্র। অনাগত প্রজন্মের কাছে ছাপাখানাটি কুমারখালীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করবে। প্রসঙ্গত, সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার বাংলা ১৩০৩ (১৮৩৩ ইং) সনের ৫ শ্রাবণ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কুন্ডুপাড়ায় জনগ্রহণ করেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাদের শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে হরিনাথ সারা জীবন আন্দোলন করেছেন। অত্যাচারিত এবং অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশে তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় লিখতেন। পরে ১৮৬৩ সালে তিনি নিজেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক ও শেষে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও কৃষকদের প্রতি তখনকার নীলকর ও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হতো। হরিনাথের জীবনে কখনো সচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১৮৭৩ সালে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। রাজশাহীর রানি স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক অনটনের কারণে এবং সরকারের মুদ্রণ শাসনব্যবস্থার কারণে তিনি পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

সর্বশেষ খবর