শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বহু গ্রুপে বিভক্ত আওয়ামী লীগ মামলায় জর্জরিত বিএনপি

সাইফুল ইসলাম, যশোর

বহু গ্রুপে বিভক্ত আওয়ামী লীগ মামলায় জর্জরিত বিএনপি

যশোরের অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে যশোর-৪ আসন। এখানে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায়। দুই উপজেলার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গেই তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। চতুর্থবারের মতো নৌকার টিকিট পাওয়া তাঁর জন্য কঠিন হয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

রণজিৎ কুমার রায় ছাড়াও দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক ঝাঁক নেতা মাঠে নেমেছেন। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গ্রুপের। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদা আলাদাভাবে পালন করে জনসমর্থনের প্রমাণ দিচ্ছেন তারা। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় ছাড়াও আরও আটজনের তৎপরতা চোখে পড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী দলীয় কর্মসূচিগুলোতে বাঘারপাড়ায় বড় বড় শোডাউন করে আলোচনায় এসেছেন। এ ছাড়া সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাব, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এনামুল হক বাবুল, সাধারণ সম্পাদক সরদার অলিয়ার রহমান, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আরশাদ পারভেজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব সন্তোষ অধিকারী এবং ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা কম হলেও মামলায় জর্জর দলীয় নেতা-কর্মীরা। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইউব। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এবারও তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে স্থানীয় বিএনপির বেশিরভাগ নেতা-কর্মী মনে করছেন। ১১ মাস কারাভোগ করে ঈদুল আজহার পর গত ৩ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন টি এস আইউব। কারাগার থেকে বের হয়েই এলাকার রাজনীতিতে পুরোমাত্রায় সক্রিয় হয়েছেন। তবে তার বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন পেতে আরও দুজন চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফারাজী মতিয়ার রহমান ও বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই মনা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক নেতা জহুরুল হক জহিরও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় আছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কেবল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কমিটি দিয়েই চলছে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ আছে। সংসদ সদস্য রণজিৎ রায় বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও তার সঙ্গে এক মঞ্চে যান না সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী। প্রভাবশালী অন্য নেতারা দলীয় কর্মসূচি পালন করেন পৃথকভাবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থের বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের চাকরি দিয়েছেন সংসদ সদস্য- এমন অভিযোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। সংসদ সদস্য রণজিৎ রায় দলের মধ্যে বিভক্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল, অনেক নেতা। সবাই চায় লিডারশিপ ধরে রাখতে। এটা বড় কথা নয়। শেষ পর্যন্ত সবাই নৌকার পক্ষে থাকবে। নেত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দেবেন, সবাই তার সঙ্গেই থাকবেন। আমি মনোনয়ন না পেলেও নৌকা যার কাছে থাকবে, আমিও তার সঙ্গেই থাকব। জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী বলেন, ‘অতীতে বাঘারপাড়া-অভয়নগর এলাকায় ব্যক্তিগত স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমি সবসময় অসহায় নেতা-কর্মীদের বিপদে-আপদে সঙ্গে থেকেছি’। অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল বলেন, ‘সবকিছু উজাড় করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র হিসেবে জনগণের সেবা করেছি। দলের কাছে এবার মনোনয়ন চাইব’। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার কাছে হেরেছিলেন বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইউব। সবশেষ নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। টিএস আইউব বলেন, গত তিন টার্মেই আমি দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলাম। বাঘারপাড়া-অভয়নগর উপজেলার সাধারণ মানুষ, দল ও দলের নেতা-কর্মীদের জন্য আমার যে ত্যাগ, তা  দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই অবগত আছেন। বড় দুই দলের বাইরে এ আসনে সক্রিয় আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জহুরুল হক জহির। গত নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। ভোট পৃথক বা জোটবদ্ধ যেভাবেই হোক দলের সিদ্ধান্ত মেনে মাঠে থাকব।

সর্বশেষ খবর