রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিসিটিভি ফুটেজে খুনের ভয়ংকর দৃশ্য শনাক্ত খুনিরা

সাখাওয়াত কাওসার

সিসিটিভি ফুটেজে খুনের ভয়ংকর দৃশ্য শনাক্ত খুনিরা

নিহত রুবেল

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৫৭ মিনিট। শুনশান নীরবতা শাহজাহানপুর গুলবাগ জোয়ারদার লেনে। হঠাৎই দেখা যায় অজ্ঞাত এক যুবককে চাপাতি হাতে পেছন থেকে ধাওয়া করছিলেন অজ্ঞাত আরও তিন যুবক। ১২টা ৫৮ মিনিটে তিন রাস্তার মোড় পার হতেই একজন চাপাতি দিয়ে ঘাড়ে কোপ দেন রুবেলকে। গগনবিদারী চিৎকার করে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। তাকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে দুর্বৃত্তরা। খুনিদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছিলেন রুবেল। তবু দুর্বৃত্তদের মন গলেনি। গোপন ক্যামেরার পাশাপাশি ওই নৃশংস দৃশ্যের অন্যতম নীরব দর্শক ছিলেন বিপরীত দিক থেকে আসা একজন পথচারী। তিন রাস্তার মোড়ের পাশাপাশি একটি দেয়ালের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ভয়ংকর এ দৃশ্য দেখছিলেন তিনি। রুবেলের চিৎকার শুনে গলির কয়েকটি কুকুর ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে যায়। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ করে। রাত ১২টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বেঁচে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছিলেন রুবেল। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হয়তো হাসপাতালের দিকে বিপরীত দিকে আসার চেষ্টা করছিলেন। তবে কয়েক স্টেপ পেছনের দিকে ফিরলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে থাকা হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজে এমনটাই দেখা গেছে।

পরে জানা গেছে, সেই অজ্ঞাত ভিকটিমই যুবলীগ কর্মী অলিউল্লাহ রুবেল। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে উদ্ধার করে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতাল নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের গুলবাগে যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেল হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করার দাবি করেছে পুলিশ। বলেছে, যারা সরাসরি জড়িত, যারা মোটরসাইকেলে এসে পাহারা দিয়েছে এবং যারা মেরে পালিয়েছে, তাদের নাম তারা পেয়েছে। তাদের শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ‘শাহজাহানপুরে যুবলীগ নেতাকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের নাম আমরা পেয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, যারা মোটরসাইকেলে এসে পাহারা দিয়েছে এবং যারা মেরে পালিয়েছে, তাদের নাম আমরা পেয়েছি। আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করব।’

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার পর থেকে তা আরও গাঢ় হয়েছে। ফুটপাথ, বাজার ও ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এর অন্যতম কারণ। এগুলোর ভাগাভাগিও দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হিসেবে ক্জ করেছে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে ডিবি। যদিও গত রাত পর্যন্ত তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। বলেছে, আসামিরা সবাই গোয়েন্দাজালেই রয়েছে।

জানা গেছে, নিহত রুবেল ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। একসময় শাহজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক ছিলেন তিনি। খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও কোনো পদে ছিলেন না। রাজনীতির বাইরে তার পেশা ছিল ইন্টারনেট ও ডিসের ব্যবসা। পরিবার নিয়ে তিনি গুলবাগের জোয়ারদার লেনের ১৫৩/এ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। স্ত্রী তানজিনা দেওয়ানও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। রুবেল হত্যার ঘটনায় তানজিনা দেওয়ান বাদী হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামি অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে গুলবাগ জোয়ারদার লেনে বাসার পাশের রাস্তা।

আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যার সঙ্গে এই হত্যাকান্ডের কোনো যোগসূত্র আছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, ‘দুটি ঘটনাই শাহজাহানপুরে। আমরা যাদের নাম পেয়েছি শিগগিরই গ্রেফতার করব। গ্রেফতারের পর আমরা দেখব দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় কি না।’

রাজধানী তাহলে এখনো আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেকেই তো গ্রেফতার আছে। তারা জেলখানায় রয়েছে। আমরা বুঝতে পারি জেলখানায় গিয়েও তারা শলাপরামর্শ করে। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব, আন্ডারওয়ার্ল্ডের কারা কারা এ কাজগুলো করে।

সর্বশেষ খবর