মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোটের বার্তা নিয়ে পাঁচ মাস মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

ভোটের বার্তা নিয়ে পাঁচ মাস মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডিসেম্বরের শেষে কিংবা নতুন বছরের শুরুতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে সময় মাত্র পাঁচ মাস। এই কয়েক মাস ভোটের বার্তা নিয়ে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। দলের প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করবেন জেলা ও বিভাগীয় নির্বাচনী জনসভা। দলটির শীর্ষ নেতারা করবেন উন্নয়ন শোভাযাত্রা, শান্তি সমাবেশ, কর্মিসভা, বর্ধিতসভা, উঠান বৈঠক। সব মিলে টানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখবে ক্ষমতাসীনরা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ভোটের বেশি দিন সময় বাকি নেই। এই সময়টা কাজে লাগাতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। ভোটের সামনে বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য করার চেষ্টা করছে। আমরা দেশবাসীকে নিরাপদ রাখতে রাজপথে থাকব। পাশাপাশি বিগত সাড়ে চৌদ্দ বছরের উন্নয়ন ও অর্জনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে উন্নয়ন শোভাযাত্রা, কর্মিসভা, উঠান বৈঠক করব।’ সামনে শোকাবহ আগস্ট মাস। এই মাসজুড়ে শোকের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। ৫ আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন। ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা দিবস। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে তারুণ্যের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে আগামী কয়েক মাস। এ ছাড়াও ছাত্রলীগ জেলা-বিভাগ ও মেডিকেল কলেজগুলো কর্মিসভাসহ পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

জানা গেছে, ভোটের আগে দলকে সুসংগঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য জেলা নেতাদের ঢাকায় ডেকে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। আগামী ৬ আগস্ট গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, জাতীয় পরিষদের সদস্য, দলীয় সংসদ সদস্য, দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জেলা-উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এতে অংশ নেবেন। ওই সভা থেকে ভোট পর্যন্ত করণীয় কী সেসব বিষয়ে বার্তা দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। আগামী ২ আগস্ট রংপুরে জনসভা করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোটের আগে নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে অন্তত ২০টি জেলায় জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব জনসভা মূলত নির্বাচনী জনসভায় রূপ পাবে। জনসভার পাশাপাশি জেলায় নানা উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘অনেক আগেই দলের বিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে। সেই টিম এখন জোরালোভাবে তৃণমূলে যাবে। সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের কেন ধারাবাহিকতা প্রয়োজন সেগুলো জনগণকে তুলে ধরব। নির্বাচন পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়েই মাঠে থাকব।’ এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘গণভবনে সারা দেশের দলীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা-উপজেলা-থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছেন। মূলত সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল কী ভাবছেন সে কথা তিনি আগে শুনবেন। পরে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা একটা নির্বাচনী গাইডলাইন দেবেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।’ তিনি বলেন, ‘নেত্রী কী বার্তা দেবেন- সেটা নেত্রীই ভালো জানেন। তবে আমরা ধারণা করছি, সব ভেদাভেদ ভুলে জয়ের প্রশ্নে, নৌকার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকা, ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে যে জনগণের উন্নয়ন হয়, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছানোর নির্দেশনা থাকতে পারে। সর্বোপরি যারা রাজনীতিকে বিরাজনৈতিককরণের খেলা শুরু করেছেন তাদের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা।’ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়। এমন অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচন যে চ্যালেঞ্জিং হবে- তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ। দেশি-বিদেশি নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে কীভাবে নির্বাচনের এই চ্যালেঞ্জ পারি দিতে হবে- তা দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাও দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বর্তমান সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে? কতগুলো মেগাপ্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে? এগুলো বাস্তবায়নের ফলে দেশের মানুষ কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে? এ বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা করার জন্যও দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেবেন তিনি। দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও কোন্দলসহ বিরোধপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা সমাধানের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘করোনাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন বিশেষ বর্ধিত সভা করা হয়নি। সামনে নির্বাচন। সে কারণে এই বিশেষ বর্ধিত সভা বেশ গুরুত্ব বহন করে। জেলা-উপজেলা-থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা আসবেন। সঙ্গে দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও থাকবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখের কথা শুনে তারা আরও বেশি উজ্জীবিত ও সংগঠিত হবেন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে বার্তা দেবেন-তৃণমূল সেই বার্তা নিয়ে ফিরে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবেন।’ আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমাদের কাছে শেখ হাসিনা হচ্ছে সাহস, শক্তি ও অনুপ্রেরণা। শেখ হাসিনার কাছে এসে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কথা বলার সুযোগ পেলে আরও শক্তি অনুপ্রেরণা বেড়ে যাবে। আগামী ৬ আগস্ট গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের ভোটের বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ফিরে গিয়ে টানা পাঁচ মাস সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর