মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুরুত্ব বিএনপির

তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে ঢাকা ঘেরাও, হরতাল, অবরোধের মতো বড় কর্মসূচি ঘন ঘন ঢাকামুখী কর্মসূচিতে প্রাধান্য, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ থেকে আসতে পারে পদযাত্রা, সমাবেশ, গণ অবস্থান, মানববন্ধন, বিক্ষোভের মতো যুগপৎ কর্মসূচি

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুরুত্ব বিএনপির

সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। ২৭ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আসতে পারে পদযাত্রা, সমাবেশ, গণঅবস্থান, মানববন্ধন, বিক্ষোভের মতো যুগপৎ কর্মসূচি। অবস্থা বুঝে ধাপে ধাপে তা আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে নিয়ে যাবে দলটি। এবার ঢাকামুখী কর্মসূচিকেই অধিক প্রাধান্য দেওয়া হবে। ঘন ঘন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে রাজধানীতে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে ঢাকা ঘেরাও, হরতাল, অবস্থান, অবরোধের মতো বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। এসব কর্মসূচি ঘোষণা নির্ভর করবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ওপর। তবে কোনো ধরনের সহিংস পথে না হেঁটে জনগণকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ সিরিজ কর্মসূচির মাধ্যমেই বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে নজির সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। দলের নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপি সব সময়ই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েই বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাবে। মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। জনগণের এই সংগ্রামের বিজয় আসন্ন। দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও এবার সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে। সে কারণে ক্ষমতাসীন সরকার এ ধরনের কর্মসূচিও বরদাশত করতে না পেরে অতীতের মতো হামলা-মামলা ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। আবারও গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে সারা দেশে। বিএনপি এর বিপরীতে পাল্টা কোনো সহিংস কর্মসূচিতে না গিয়ে, সরকারের কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক অহিংস কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি আগামী ২৭ জুলাই। সেদিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। সেই সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হবে তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি। তবে এর আগে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মতামত জেনে নেওয়া হবে। কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে মঙ্গলবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। তবে আগের কয়েকটি বৈঠকে পদযাত্রার পর মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশের মতো ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন বিএনপির র্শীষস্থানীয় নেতারা। ১২ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে মহানগর বিএনপির বিশাল সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবির ভিত্তিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী ১৮ ও ১৯ জুলাই রাজধানীসহ দেশজুড়ে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এক দফা আন্দোলনের প্রথম দফা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে দাবি করা হয়েছে, ১৮ জুলাই প্রথম দিনের কর্মসূচিতে লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়া ছাড়াও ৯ জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। দুই দিনে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলায় প্রায় তিন হাজার নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন এবং দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও দলটির দাবি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এসব বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার বিএনপিকে দূরে রেখে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতা ধরে রাখার নীলনকশা তৈরি করেছে। আবারও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। পুরনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে সাজানো রায় দিয়ে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার পরিকল্পনা করেছে। হত্যা, মামলা, হামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন তো আছেই। কিন্তু মানুষ আর এসব সহ্য করবে না। তারা জেগে উঠেছেন। রাজপথে নামা শুরু করেছেন। অবৈধ এই সরকারকে পতনের স্বাদ নিতেই হবে ইনশা আল্লাহ।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেভাবে হামলা করেছে, তাতে মনে হয় আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ওদের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘এবারের আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। পদযাত্রায় পথে পথে মানুষ যুক্ত হয়েছে। আর বিএনপি সুশৃঙ্খল রাজনীতি অব্যাহত রাখতে পেরেছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও হামলা-মামলাসহ নির্যাতনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারাই হলো সন্ত্রাসী দল। ক্ষমতাসীনদের আচরণের মাধ্যমে তাদের অবস্থান, মনোভাব ও আগামী নির্বাচনের পরিবেশ কেমন থাকবে সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে।’ দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, এক দফার আন্দোলনের শুরুটা বিএনপির প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে। নেতা-কর্মীরা সাহস নিয়ে মাঠে নেমেছেন। হামলা, মামলা, নির্যাতন এবং সংঘর্ষের পরও মাঠ ছাড়েননি তারা। তাদের যুক্তি হলো, এতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে। রাজধানীতে দুই দিনের প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছেন নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যেও কেবল হামলা হলেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তারা। এ জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপরই জোর দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড।

আগামী ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে যৌথ সভা করে যাচ্ছে দলটি। একই দিন যুগপৎভাবে ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল ও জোট। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশের মাত্র চার দিনের মাথায় ঢাকায় একেবারে মূল দলের মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। সরকার পতনের এক দফা ঘোষণার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় ঢাকার এই মহাসমাবেশ আহ্বান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা। এ ছাড়া ২২ জুলাইয়ের তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব নিজে বেশ কয়েকবার স্লোগান ধরে বলেছেন- ‘আমাদের দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’। এ সময় সমবেত নেতা-কর্মীরাও ‘দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ বলে সমস্বরে মহাসচিবের স্লোগানের জবাব দেন। তারুণ্যের সমাবেশে জনসমাগম তথা মানুষের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। এ থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও বেশি উজ্জীবিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া এবার আর দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎভাবে ঘোষণা দিয়েছে, সবাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এমনকি জাতীয় পার্টি ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনও পরিষ্কার করে বলেছে, এই সরকারে অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও বলেছে, অন্যান্য দলও বলেছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই কালবিলম্ব না করে এই সরকারের উচিত পদত্যাগ করে বিদায় নেওয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর