বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

১১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা রাস্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা রাস্তায়

বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে গত ১১ জুলাই থেকে আন্দোলনে রয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই শিক্ষকরা গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় ১৫ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারির মধ্যে পাহাড়সমান বৈষম্য দূর করা ও শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্নে আন্দোলনে নেমেছেন তারা। তারা বলেছেন, যে বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয় তা দিয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে শিক্ষকদের টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শিক্ষকরা বাঁচতে না পারলে পাঠদান করবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নও রেখেছেন তারা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেমেছেন বলে ভাষ্য এই শিক্ষকদের। জাতীয়করণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে পাঠদান বর্জন করে তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। প্রেস ক্লাবের সামনে এই আন্দোলনে গতকাল ৫ সহস্রাধিক শিক্ষক সরব ছিলেন। দিনের পর দিন আন্দোলন চললেও শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে ভাটা লক্ষ্য করা যায়নি।

আন্দোলনস্থলে গিয়ে গতকাল এ প্রতিবেদক কথা বলেন শিক্ষকদের সঙ্গে। ময়মনসিংহের গৌরিপুরে মাওহা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহজাহান ফকির বলেন, চলমান আন্দোলনের কারণে আমাদের স্কুলে কোনো ক্লাস হচ্ছে না। ক্লাস বর্জন করে শিক্ষকরা এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। গত পাঁচ দিন ধরে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। একই উপজেলার থলতবাড়ী আদর্শবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আলকামাল জানান, শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্নে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

শিক্ষক নেতারা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকরা একই যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করলেও তাদের বেতন-ভাতা আর সুযোগ সুবিধায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাসে চিকিৎসা ভাতা পান ১৫০০, অথচ বেসরকারি শিক্ষক পান তাদের তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ মাত্র ৫০০ টাকা। সরকারি শিক্ষকরা বাড়িভাড়া পান বেতনের ৪৫ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষরা এই বাড়িভাড়া পান মাত্র ১০০০ টাকা। সরকারি শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের শতভাগ। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের এই উৎসবভাতা দেওয়া হয় মাত্র ২৫ শতাংশ। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ভাতা দিয়ে শিক্ষকদের চিকিৎসা খরচ, বাড়িভাড়া বা উৎসব আয়োজন কোনোটিই করা সম্ভব হয় না। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্নে এসব বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর একজন শিক্ষক মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্কেল পান। এক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয় না। অথচ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেই একজন শিক্ষক এর অনেক বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর তারা পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিকালীন একটি নির্দিষ্ট হারে সরকারের খাতে জমা দেওয়ার পরও অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এসব বৈষম্য দূর করার দাবিও শিক্ষকদের।

শিক্ষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলন দমাতে শিক্ষকদের স্কুলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কিন্তু এরপরও আন্দোলনে শিক্ষকদের উপস্থিতি কমেনি। তিনি দাবি করেন, সরকারের এই বিজ্ঞপ্তির কারণে শিক্ষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এই আন্দোলনে বেশি অংশ নিচ্ছে, ফলে প্রতিনিয়তই শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতির সংখ্যা বাড়ছে। জাতীয়করণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এই আন্দোলন চলতে থাকবে বলে জানান তিনি।

কাওছার আহমেদ বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি বলেছেন, আমাদের আন্দোলনে অন্য কারও উসকানি রয়েছে। আমরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে চাই, এই আন্দোলনে উসকানি নেই বরং মন্ত্রীর বক্তব্যেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উসকানি রয়েছে। শিক্ষক আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই মন্ত্রীর এমন উসকানি বলে দাবি করেন এই শিক্ষকনেতা।

সর্বশেষ খবর