বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন

পুনরায় শাস্তি নির্ধারণে উপাচার্যকে নির্দেশ

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ছাত্রী নির্যাতনের দায়ে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনের এক বছরের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে পুনরায় সাজা নির্ধারণে উপাচার্যকে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্টের প্রথম ভাগের ধারা ৪, ৫ ও ৭ এবং দ্বিতীয় ভাগের এর ৮ (২) ধারা অনুযায়ী উপাচার্যকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আগামী ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১৯ জুলাই ইবি ছাত্রী নির্যাতনে সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের আদেশ বিধিসম্মত হয়নি বলে মন্তব্য করেন হাই কোর্ট। গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের নেতৃত্বে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ছাত্র শৃঙ্খলা আইন অনুযায়ী ওই পাঁচ ছাত্রীর সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়। হাই কোর্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্ত হাই কোর্টকে জানান। হাই কোর্র্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ ১৯৮৭ সালের কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা তারা নেয়নি। এটা না নেওয়ার কারণ হতে পারে, এটা তাদের আইনগত অজ্ঞতা বা ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা অথবা অপরাধীদের পক্ষ নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্টের প্রথম ভাগের ৪, ৫ ও ৭ ধারা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ায় সুযোগ রয়েছে। সেটা স্থায়ী বহিষ্কারও হতে পারে। কিন্তু সেটা তারা না করে কোড অব কন্ডাক্টের দ্বিতীয় ভাগের ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে সাজা দিয়েছে। শুনানির শেষ পর্যায়ে শাহ মঞ্জুরুল হক শিক্ষার্থীদের যে শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়েছে তা বহাল রাখার জন্য আদালতে সুপারিশ করেন। তখন আদালত বলেন, আমরা কারও পক্ষ নিতে চাই না। আইনে যা আছে সে অনুযায়ী শাস্তি হবে। আর এর মাধ্যমে আমরা সমাজে একটা বার্তা দিতে চাই যে, এ ধরনের অপরাধ করতে মানুষ যাতে সাহস না পায়। কোর্ট আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিষয়টি নিয়ে এসে বলেন, একটা ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপের মতো করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরাট অবহেলা ছিল। যার ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও যে ঘটনা ঘটেছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও সার্বিক দায়িত্বে থাকা সবারই অবহেলা ছিল। এ অবহেলার কারণে ছাত্রী নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, ‘এটা আইনানুগ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির যে বিধান আছে সে বিধান ফলো করে আইনানুযায়ী শাস্তি দিয়ে আগামী ২৩ আগস্ট হাই কোর্টকে জানাতে হবে।’ এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘আমি আমার দাবিতে অনড় রয়েছি। আমার চাওয়া তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হোক।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। আমরা অফিশিয়ালি নোটিস পাইনি। এ ছাড়া আইন প্রশাসকও ঢাকাতে আছেন।’ প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মির বিরুদ্ধে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর