শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমুদ্রে নামবে বিমান

কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সমুদ্রে নামবে বিমান

সমুদ্রসৈকত ছুঁয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর কক্সবাজারে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দৃশ্যমান হয়েছে সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে যাওয়া কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে। চলতি বছরই শেষ হচ্ছে এই রানওয়ের নির্মাণকাজ। আর কাজ শেষ হলেই এটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা প্রতিষ্ঠান বলছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর এ বছরের মধ্যেই সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে বিমান ওঠানামা করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাগরের বুক চিরে আকাশপানে ছুটে চলা। উত্তাল সাগরকে বশে এনে এমন কর্মযজ্ঞ আগে দেখেনি বাংলাদেশ, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষও। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক মাসের। এর পরই প্রস্তুত দেশের সবচেয়ে বড় রানওয়েতে সমুদ্র ছুঁয়ে ওঠানামা করবে বিমান। অবতরণের সময় যাত্রীদের মনে হবে, যেন সাগরেই নামতে যাচ্ছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী অনুভূতি দেওয়ার পাশাপাশি কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা কোম্পানি জানিয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করবে তারা। কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক লি গুয়াংচি বলেন, সমুদ্রের বুকে রানওয়ে প্রকল্পের কাজটা সহজ ছিল না। ২০২১ সালে কাজ শুরুর পর থেকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকাল, এরপর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর উত্তাল সাগরকে বশে আনাসহ জটিলতা। কিন্তু সবকিছু মোকাবিলা করে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে সমুদ্রের বুকে রানওয়ে। আরও কিছু কাজ রয়েছে, যা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ করা হবে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু সূর্যের আলোতে আকাশপথে কক্সবাজার যাওয়ার দিন শেষ হচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাতেও যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে। এত দিন বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য কম ও অন্যান্য অবকাঠামো অনুন্নত থাকায় সব ধরনের বিমান চলাচল করতে পারত না। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবিচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকদের ঢাকা হয়ে কক্সবাজার যেতে হতো। আর এর ফলে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হতো তাদের।

এসব ভোগান্তি দূর করার জন্য রানওয়ে ও টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে ২০১২ সালে একটি মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জায়গা না থাকায় রানওয়ে সম্প্রসারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা থেকে সমুদ্রসৈকতের ভিতরই রানওয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়। অবশেষে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০২১ সালে শুরু হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর জন্য প্রথমে সমুদ্রের তলদেশে ব্লক নির্মাণ করা হয়। বিশাল ঢেউ থেকে সুরক্ষা দিতে কংক্রিট ফেলে গড়ে তোলা হয় বাঁধ। তারপর সেটির ভিতর বানানো হচ্ছে স্থাপনা। দেশে এই প্রক্রিয়ায় এবারই প্রথম কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২.৭৪ কিলোমিটার। সম্প্রসারণ কার্যক্রম শেষে আধা কিলোমিটার বেড়ে নতুন দৈর্ঘ্য হবে ৩.২ কিলোমিটার। দৃষ্টিনন্দন এ রানওয়েটি হবে উপমহাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সমুদ্র শাসন করে তৈরি করা প্রথম রানওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর