শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

শ্বেতপদ্মে মুগ্ধ দর্শনার্থী

রাহাত খান, বরিশাল

শ্বেতপদ্মে মুগ্ধ দর্শনার্থী

বরিশাল নগরীর ঐতিহাসিক পদ্মপুকুরে এবার বেশ কিছু শ্বেতপদ্ম ফুটেছে। শেষ বিকালে এর নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। তাদের ভাষায় শ্বেতপদ্ম ফুলের সৌন্দর্য খুবই মনোমুগ্ধকর।

নগরীর বান্দ রোড লাগোয়া বিআইডব্লিউটিএ নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় ‘হিমনীড়’ চত্বরে এই পদ্মপুকুর। তিন বছর আগে কর্তৃপক্ষ আগাছা পরিষ্কারের নামে পদ্মপুকুরের এই জলজ উদ্ভিদ (পদ্মগাছ) কেটে ফেলে। তাই গত কয়েক বছর পদ্মপুকুর ছিল বিবর্ণ। এমন শ্বেতপদ্ম পুকুর দেশ-বিদেশে বিরল; ২০১৭ সালে পদ্মপুকুর পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এ মন্তব্য করেছিলেন বিআইডব্লিউটির সাবেক চেয়ারম্যান ও মরিশাসে নিযুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মান্নান হাওলাদার। তার মতে, গোলাপি পদ্মফুল অহরহ দেখা যায়। তিন বছর আগে পদ্মপুকুরের পদ্মগাছ কেটে ফেলার পর নাগরিক সমাজ বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানায়। কেটে ফেলা গাছের কান্ড থেকে গাছ গজিয়ে পরের বছর অল্প কিছু শ্বেতপদ্ম ফোটে। এরপরের বছর আরও বেশ কিছু ফুল ফোটে। ২০২২ সালে পুকুরের পশ্চিম-উত্তরপাশে আয়রন স্ট্রাকচারের ছাউনিযুক্ত একটি অবকাঠামো (চা চক্রের স্থান) নির্মাণ করা হয়। এতে পুকুরটি বেশ পর্যটনবান্ধব হয়। তবে এ বছর পুকুরে বেশ কিছু শ্বেতপদ্ম ফুটেছে। শ্বেতপদ্ম দেখতে প্রতিদিন পদ্মপুকুরের পাশে ভিড় করেন সৌন্দর্যপ্রেমীরা। দলে দলে পদ্মপুকুর দেখতে আসেন তারা। চারদিকে নিরাপত্তা দেয়ালে (গ্রিল যুক্ত) ঘেরা পুকুরে শ্বেতপদ্মের সৌন্দর্য দূর থেকে অবলোকন করতে হয় তাদের। তারা সেখানে শ্বেতপদ্মের ছবি তোলেন, কেউ তোলেন সেলফি। পদ্মপুকুর দেখতে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জেরিন আক্তার বলেন, পড়ন্ত বিকালে শ্বেতপদ্ম ফুলের সৌন্দর্য খুবই মনোমুগ্ধকর। এই পুকুরটি সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত মনে করেন, বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল হক। নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই পুকুরটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হোক, বলেন তিনি। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সময় বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পদ্মপুকুর সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত শ্বেতপদ্ম পাওয়া যায়। এটা (Nelumbo Nucifera) হার্ভ জাতীয় উদ্ভিদ বা প্লান্ট। ভাসমান জলজ উদ্ভিদও বলা হয়। পদ্মফুল সৌন্দর্য ছড়ায়। এই ফুলের ভেজষ গুণও অনেক। পদ্মগাছের কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর সিনিয়র ড্রাফট্সম্যান এ কে এম মনিরুজ্জামান জানান, ব্রিটিশ আমলে বান্দ রোডের পাশে সাড়ে ৫ একর জায়গায় স্টিমার কোম্পানির কার্যালয় করা হয়। ১৯৬৫ সালে মেরিন ওয়ার্কশপের তৎকালীন ম্যানেজার জার্মান নাগরিক মি. ইলিগনর বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু শ্বেতপদ্ম সংগ্রহ করে পুকুরের তলদেশে রোপণ করেন। ধীরে ধীরে পুরো পুকুর সাদা পদ্মে ছেয়ে যায়। যার পরিচিতি এখন ‘পদ্মপুকুর’ নামে। ১৯৪২ সালে জরিপ অধিদফতরের এসএ নকশায় বিআইডব্লিউটিএর ৮০ শতাংশ জুড়ে ‘পদ্মপুকুর’ উল্লেখ রয়েছে। বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন-উর রশীদ বলেন, ফুলগুলো যেভাবে আছে সেভাবে রেখেই রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যে আসে সেই ফুল ছেড়ে। এটা একটা হেরিটেজ। একটা ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস। এখানে একটা ভিভিআইপি রেস্ট হাউস আছে। এটা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত হবে না।

সর্বশেষ খবর