সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙা রাস্তা জলজটে দুর্ভোগ

ডিএনসিসিতে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড ♦ উন্নয়ন কাজের ধীরগতি ♦ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল এক বছর ♦ মিলছে না নাগরিক সুবিধা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ভাঙা রাস্তা জলজটে দুর্ভোগ

খানাখন্দে ভরা রাস্তা। বছরখানেক আগে দুই পাশে ড্রেন করতে গিয়ে রাস্তা কাটা হয়েছে। এরপর আর ঠিক করা হয়নি। রাজধানীর উত্তরখান এলাকার মাস্টারপাড়া মোড় থেকে মুক্তার মার্কেট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। খানাখন্দে ভরা এবড়োখেবড়ো রাস্তা। রিকশা, ভ্যান তো দূরের কথা সাইকেলে, মোটরসাইকেলে যাওয়ার পরিস্থিতিও নেই। সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে দুর্ভোগ পৌঁছায় চরমে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তার পরিস্থিতি ভয়াবহ। ভাঙা রাস্তা, জলজট এখানে নিত্যসঙ্গী। শুধু এই ওয়ার্ড নয়, ছয় বছর আগে ডিএনসিসিতে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের চিত্র প্রায় এরকমই। উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে মিলছে না কাক্সিক্ষত নাগরিক সেবা। মুক্তার মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আউয়াল হোসেন বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে, কেউ অসুস্থ হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্স তো অনেক দূরের বিষয়, কোনো যানবাহনে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। বর্ষা-বৃষ্টিতে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। হাঁটুপানি পার হয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হয়েও সাধারণ নাগরিক সুবিধাটুকুও আমরা পাই না।’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাইতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যোগ করা হয় আরও ১৮টি ওয়ার্ড। বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। এতে ৩৬টি থেকে ডিএনসিসির ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪টিতে। ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া এসব ওয়ার্ডের নাগরিক সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। কিন্তু এখনো দুর্ভোগে বেহাল নগরজীবন। আজমপুর রেলগেট থেকে উত্তরখান শাহ কবির মাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কে সারা বছর পানি জমে থাকে। রাস্তার পাশে পানি নিষ্কাশন নালা (ড্রেন) না থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই শাহ কবির মাজার রোড এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। ফলে এলাকাবাসী ও যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ সড়কে রয়েছে হাসপাতাল, পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সালেহউদ্দিন নামের শাহ কবির মাজার রোডের এক মুদি দোকানি বলেন, সড়কের পাশে অবস্থিত প্রতিটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও দোকানঘরের সামনে দুই ফুট উঁচু করে ইটের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের নূরের চালা, সাঈদনগর এলাকা। নূরের চালা বাজারের বাসিন্দা মজিদ আলী বলেন, ‘এক ফোঁটা বৃষ্টি নেই অথচ আমরা পানিতে ভাসছি। নোংরা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। মশার কামড়ে বাসাবাড়িতে থাকা যায় না।’ ডিএনসিসি’র ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেনের উন্নয়ন না হওয়ায় এলাকাবাসীর জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। বিশেষ করে সাঈদনগর থেকে বোট ঘাট পর্যন্ত এলাকায় রাস্তা এবং ড্রেন দ্রুত নির্মাণ না করলে বৃষ্টি-বর্ষায় জলজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’ ডিএনসিসি প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৪ জুলাই ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ডিএনসিসিতে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন  (ফেজ-১) প্রকল্প অনুমোদন পায়। করোনা মহামারির কারণে অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়ায় অনুমোদনের দেড় বছর পর ২০২২ সালের ৬ মার্চ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এ নির্মাণ কাজ করছে। প্রকল্পের কাজ শেষের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় এর মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের ধীরগতির কারণ হিসেবে করোনা মহামারিকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, প্রথম বছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৮০ কোটি টাকা। ফলে সামগ্রিক কাজে তেমন কোনো অগ্রগতিই হয়নি। এখন অর্থ ছাড়ে গতি আসায় দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি কম হয়েছে। এখন পূর্ণ গতিতে কাজ শুরু হয়েছে। অর্থ ছাড়ের সমস্যা কেটে গেছে। আমরা এসব এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধার্থে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বড় কয়েকটি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করব। এর মধ্যে রয়েছে- আজমপুর রোড, দক্ষিণখানের প্রধান সড়ক, হরিরামপুর রোড। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্রশস্ত সড়ক, ড্রেন থেকে শুরু করে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পাবেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।’

 

সর্বশেষ খবর