সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

নুড়ি পাথরের বিছানাকান্দি

আলম শাইন

নুড়ি পাথরের বিছানাকান্দি

ভ্রমণবিলাস নয়; আনন্দ। এই আনন্দের নেশায় যাকে একবার পেয়ে বসে তা থেকে তাকে নিবৃত্ত করা কঠিন। ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে বাড়ি-গাড়ি, ধন-খ্যাতি তুচ্ছতর। দুনিয়ার যত বিলাস, যত আনন্দ, তার কাছে অতি নগণ্য মনে হয়। এমনই এক জাদুকরি শক্তি ভ্রমণের। যে শক্তি অর্জনে একজন মানুষকে প্রকৃতিপ্রেমী হতে সাহায্য করে। অবশ্য স্থানভেদেই বিষয়টা নির্ভর করে। যেমন প্রত্নতত্ত্ব দর্শনে এক অনুভূতি, বন-পাহাড়-সমুদ্র দর্শনে আরেক অনুভূতি। আবার ঝর্ণাধারা অথবা নুড়ি পাথর দর্শনে আসে ভিন্নমাত্রার সুখানুভূতি। তেমনি একটি রোমাঞ্চকর ভিন্নমাত্রার সুখানুভূতির জায়গা পিয়াইন নদীর তীর। যেখানে অবস্থিত দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ‘বিছানাকান্দি’। বিছানাকান্দিকে বলা হয়, সিলেট জেলার পর্যটন কেন্দ্রের স্বর্গভূমি; এতটাই আকর্ষণীয় জায়গাটা। এ ছাড়া অর্থনীতির এক বিশাল ক্ষেত্র জায়গাটা। এখানকার বাহারি নুড়ি পাথরের চাহিদা দেশে ব্যাপক; যা পিয়াইন নদী থেকেই উত্তোলন করা হয় বছরের নির্দিষ্ট মৌসুমে। সেই নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করতে হলে শীতের শুরুতে যেতে হবে। বিছানাকান্দি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সীমান্তঘেরা মেঘালয় পাহাড়ের (খাসিয়া পাহাড়) কোলঘেঁষেই এ পর্যটন কেন্দ্রের শুরু। সীমান্ত বরাবর তাকালে সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে দেখা যায় চমকপ্রদ একটা ট্রায়াঙ্গেলের চিত্র। যা দর্শনার্থীদের প্রচন্ড আকর্ষণ করে। ট্রায়াঙ্গেলের ঠিক ওপরের দিকে রয়েছে নির্গমনশীল নান্দনিক একটা ঝর্ণাধারা। এ ঝর্ণাধারা থেকেই প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কিউসেক জল নিমজ্জিত হয়ে পাথরের চাদর গড়িয়ে পিয়াইন নদীতে মেশে। ভারি সুন্দর মনভোলানো সেই দৃশ্য! তবে শুকনো দিনের চেয়ে বর্ষামৌসুমে এ দৃশ্য বেশি নজরকাড়ে। দূরের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির জল মেঘালয় পাহাড়ের ঝর্ণাধারায় মিলিত হয়ে নিমজ্জিত হওয়ার বিস্ময়কর দৃশ্যে পর্যটক মোহিত হয়ে যান। যা দেখলে চট করেই চোখ ফেরানো যায় না; এমনি নয়নাভিরাম দৃশ্য সেটা। তা ছাড়া সীমান্তের ওপারে পাহাড়ের গায়ে খাসিয়াদের সারিবদ্ধ বাড়িঘর, দোকানপাটও তাক লাগিয়ে দেয়। আরেকটা চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, এখানকার জল বেশ শীতল ও সুমিষ্ট। তাই প্রতিদিন শত শত পর্যটক বিছানাকান্দি ছুটে আসেন শীতল জলের তুলতুলে ছোঁয়া পেতে। তার ওপর নুড়ি পাথরের ওপর দিয়ে প্রবহমান স্বচ্ছ জলস্রোত পর্যটকের তৃষ্ণা বাড়িয়ে তোলে। তখন মনে হয় এককোষ জল উঠিয়ে গিলতে পারলে ভ্রমণের ক্লান্তি দূর হয়ে যেত; অনেকে কাজটা করেনও। সব মিলিয়ে বলা যায়, দারুণ এক সুখানুভূতি মিলে বিছানাকান্দি পা ভিজিয়ে এলে। লেখক : কথাসাহিত্যিক, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক লেখক।

 

সর্বশেষ খবর