বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
ডিএসসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ড

জলজট ভাঙা সড়কে সীমাহীন ভোগান্তি

হাসান ইমন

জলজট ভাঙা সড়কে সীমাহীন ভোগান্তি

জলজট ও ভাঙাচোরা সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নতুন যোগ হওয়া বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনভুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর শুধু কাগুজে মর্যাদা পরিবর্তন হয়েছে। নগর এলাকার সেবা বলতে তেমন কিছু পাচ্ছেন না এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তারা শুধু মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নয়, একই সঙ্গে জলজট ও ভাঙাচোরা সড়কে চলাচলের দুর্ভোগে জর্জরিত। একই সঙ্গে নেই নগর উপযোগী সড়ক, ড্রেন ও ফুটপাত। এ ছাড়া পার্ক ও উদ্যান, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, পাবলিক টয়লেট, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্র নেই কোনো ওয়ার্ডে। ডিএসসিসি থেকে এসব ওয়ার্ড নিয়ে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার কথা জানালেও গত সাত বছরে কয়েকটি সড়ক ও এলইডি বাতি ছাড়া কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

সরেজমিন ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিএসসিসির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা মশা। এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ। দিনের বেলায় মশা কম থাকলেও সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় আক্রমণ। কোথাও এক মিনিট বসে থাকা যায় না। কয়েল জ্বালিয়েও মশা থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। বিশেষ করে ত্রিমোহনী খালের আশপাশের বাড়িগুলোতেই মশার অত্যাচার বেশি। স্থানীয়রা এর কারণ হিসেবে বলছেন, বাসাবাড়ির ময়লা, প্লাস্টিকের বর্জ্য, কচুরিপানা ও আগাছায় পরিপূর্ণ এ খালই মশার নিরাপদ জন্মস্থান। বিভিন্ন সময় পরিষ্কার করলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার খাল ময়লায় পূর্ণ হয়ে যায়। একই সঙ্গে এই ওয়ার্ডের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। কয়েকটি এলাকা নিচু হওয়ায় ভারী বৃষ্টি হলেই সড়কে উঠে যায় পানি। নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এলাকার প্রধান কয়েকটি সড়ক সংস্কার করলেও অধিকাংশ সড়কই কাঁচা ও সলিং করা। সড়কগুলো খুব সরু। দুটি রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। একই অবস্থা ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের। পূর্ব ও পশ্চিম নন্দিপাড়া এলাকাটি নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। একই সঙ্গে কিছু জলাশয় ও খাল রয়েছে। এগুলো অপরিষ্কার থাকায় মশা বেশি এই এলাকায়। ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের সামান্য বৃষ্টি হলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। একই সঙ্গে খালে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা থাকায় পানি পচে দুর্গন্ধ বের হয়। ডেমরায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই সড়ক বাতি নিভু নিভু জ্বলে। কোথাও আবার দিনের বেলাও জ্বলে থাকে সড়কবাতি। আর সড়কবাতি নষ্ট হলে ঠিক করা হয় মাসের পর মাস ধরে। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ডিএসসিসির ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীনগর ও ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় মানুষের স্বাভাবিক পথচলার কোনো সুযোগ নেই। এই ওয়ার্ডের প্রধান প্রধান সড়কসহ অলিগলি সব রাস্তাই বেহাল। ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণগাঁও মানিকদি সড়কের মাঝখানে ১০টি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে, যেগুলোতে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে বড়ভাঙ্গা, ডগাইর, কোনাপাড়া বাজার, ফার্মের মোড়, মাতুয়াইল ও কোনাপাড়াসহ অধিকাংশ অলিগলি অবৈধ দখলে। ডেমরার সব অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দখলে। একই সঙ্গে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাতুয়াইল পরিবার কল্যাণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির চিকিৎসাসেবা বন্ধ। ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনে কেউ আর চিকিৎসাসেবা পায় না। ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের ডেমরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কিছুটা চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ ডেমরা থানা এলাকায় নিম্নাঞ্চলগুলোর প্রায় সব কটি সড়ক এখনো কাঁচা। এ ছাড়াও ডিএসসিসিতে যুক্ত হওয়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেই পার্ক ও উদ্যান, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, পাবলিক টয়লেট, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্র। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম থাকলেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। কারণ নতুন এসব ওয়ার্ড নিয়ে আঞ্চলিক অফিস হলেও পুরাতন আঞ্চলিক অফিসগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে এক অঞ্চলকে দুই অঞ্চলের কাজ করতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সেবাগ্রহীতারা। যুক্ত হওয়া এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা না পেলেও তাদের কাছ থেকে নিয়মিত আদায় করা হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বিভিন্ন কর। জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন ১৮ ওয়ার্ড থেকে ২৮ কোটি টাকা কর আদায় করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৬০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। সার্বিক বিষয়ে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিএসসিসির সঙ্গে যুক্ত হওয়া ১৮টি নতুন ওয়ার্ডের জন্য নেওয়া মহাপরিকল্পনা শেষ হয়েছে। আমরা চলতি অর্থবছরে এসব ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি। শিগগিরই এসব এলাকার প্রধান সড়কগুলোর উন্নয়ন কাজ শুরু করব। মশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত সকাল সন্ধ্যা ওষুধ স্প্রে করছি। শুধু আমরা কাজ করলে হবে না, নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর