বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ত্রিপুরার বিষাক্ত কালো পানি ঢুকছে আখাউড়ার খালে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ত্রিপুরার বিষাক্ত কালো পানি ঢুকছে আখাউড়ার খালে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ত্রিপুরা রাজ্যের বিষাক্ত পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে নেমে আসা দূষিত কালো পানি পরিদর্শন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণ করেছে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় তাঁরা পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। গত সোমবার বিকালে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপপরিচালক মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি আগরতলা থেকে নেমে আসা দূষিত কালো পানির বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখে।

বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরের শিল্পকারখানা, হাসপাতাল ও বাড়িঘরের বর্জ্যে দূষিত পানি যুগ যুগ ধরে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা কয়েকটি খালের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

দূষিত এ পানি ছাড়া বন্ধের ব্যাপারে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও কার্যত কিছুই হচ্ছে না। রাসায়নিক মিশ্রিত এ পানি ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টের (ইটিপি) মাধ্যমে পরিশোধন করে ছাড়ার কথা থাকলেও সেই প্লান্ট এখনো হয়নি। শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ ত্রিপুরার রাজ্য সরকার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন আগরতলা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরসংলগ্ন কালন্দি খাল, কালিকাপুর গ্রামের ভিতরে বয়ে চলা জাজি নদী, বাউতলা ও উমেদপুর গ্রামের মাঝে বয়ে যাওয়া মরা গাং দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে দূষিত ‘কালো পানি’। ওপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগরতলার ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইং কারখানা, চামড়া কারখানা, মেলামাইন কারখানা, বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন বর্জ্যযুক্ত বিষাক্ত পানি কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই কালন্দি খাল, জাজি নদী ও মরা গাংয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ইটিপি প্লান্টের মাধ্যমে বিষাক্ত পানি পরিশোধন করে ছাড়ার কথা বলা হলেও প্লান্ট আর হচ্ছে না। এর ফলে যুগের পর যুগ ধরে আসা এ দূষিত কালো পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে কালন্দি খাল, জাজি নদী, মরা গাং হয়ে হাওড়া নদী ও সাইধারা নদীর মাধ্যমে তিতাস নদীর পানির সঙ্গে মিশে আখাউড়ার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী ১০ গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়িয়েছে। এসব গ্রামের অন্তত ১ হাজার ২০০ হেক্টর ধানের জমি এ পানি দিয়ে সেচ দিতে হয়। ফলে এসব জমির উর্বরা শক্তিও দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। দক্ষিণ ইউনিয়নের সীমান্তসংলগ্ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুর রহিম বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত এ কালো পানি ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোয়। চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগ বেড়ে যায় মানুষের। বিষাক্ত কালো পানির প্রভাবে অনেকেই নানা ধরনের রোগে ভুগছে। কৃষক মাঠে কাজ করতে গিয়ে পানির সংস্পর্শে গেলেই চর্ম ও শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়ী নেতারা ও সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামের মানুষ অনেক বছর ধরে কালো পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কাজ কিছুই হচ্ছে না।’ প্রতিনিধি দলের নেতা মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে নেমে আসা জাজি নদী, কালন্দি খাল ও মরা গাং। জাজি নদী, তিতাস নদীর সংযোগস্থলসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দেখে গেলাম; সঙ্গে এ নদী ও খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করেছি। আবারও আসব এবং এ পানি পরীক্ষা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেব।’ আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা জানান, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ৬০ বিজিবির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

সর্বশেষ খবর