বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

এ যেন লর্ডসের প্রতিচ্ছবি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

এ যেন লর্ডসের প্রতিচ্ছবি

সিলেট শহরের ব্যস্ততম এলাকা আম্বরখানা থেকে বেরিয়ে যত উত্তরের দিকে যাওয়া যায়, নাগরিক কোলাহলের ঢেউ চাপিয়ে প্রকৃতির অবাক করা সৌন্দর্যের হাতছানি ছুঁয়ে দেয় মন। সবুজেঘেরা পাহাড়-টিলা, চা-বাগানের নিপুণতা, পাখপাখালির গুঞ্জন, নির্মল হাওয়া হৃদয়ে দোলা দেয়। এই অকৃত্রিম সৌন্দর্যের মধ্যে পাখির বাসার মতো যেন গড়ে উঠেছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লর্ডস স্টেডিয়ামের আদলে শহরতলির লাক্কাতুরা এলাকায় গড়ে ওঠা সিলেটের এই স্টেডিয়ামে মুগ্ধ বিশ্বের নামকরা ক্রিকেটার ও ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা।

লাক্কাতুরা এলাকায় বিমানবন্দরগামী সড়কের উভয় পাশে আছে অসংখ্য পাহাড়-টিলা। সড়কের বাঁ পাশে স্টেডিয়ামের ব্যাট-বলের ফটক স্বাগত জানায় সবাইকে। ফটক দিয়ে খানিকটা ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। দেশের একমাত্র গ্রিন গ্যালারিসমৃদ্ধ এই স্টেডিয়াম পাখির চোখে দেখলে পাখির বাসাই মনে হয়। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নির্মাণশৈলী ও স্থাপনা অনেকটাই ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লর্ডস স্টেডিয়ামের মতো। তাই বিশ্বের অনেক নামিদামি ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এই স্টেডিয়ামকে লর্ডসের প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলনা করেছেন।

চারপাশে উঁচু-নিচু টিলা, চা-বাগানের বুকজুড়ে সবুজের আচ্ছাদন। মধ্যখানে সবুজ গালিচা নিয়ে দণ্ডায়মান সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ৬১৫ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৪৮৫ ফুট প্রস্থের এই স্টেডিয়াম দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে এই মাঠে প্রথমবারের মতো খেলতে নামে বাংলাদেশ। ওই বছরের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে এই স্টেডিয়াম। অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ভেন্যু অভিষিক্ত হয় ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেবার ছয়টি ম্যাচ হয়েছিল এ ভেন্যুতে। সিলেট শহরতলির লাক্কাতুরা এলাকায় নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে সেই স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হয়। এই মূল স্টেডিয়ামের ঠিক দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে নতুন আরেকটি ভেন্যু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। শুরুতে এটিকে আউটার স্টেডিয়াম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই ভেন্যুর আন্তর্জাতিক মর্যাদার জন্য আইসিসির কাছে আবেদন জানায়। সব দেখে ইতিবাচক সাড়া দেয় আইসিসি। নতুন এই ভেন্যুকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম গ্রাউন্ড-২ নামে নামকরণ করা হয়। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভেন্যু ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়। তবে এই ভেন্যুতে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বসে ২০২২ সালের ১ অক্টোবর। মেয়েদের এশিয়া কাপ ক্রিকেটে সেদিন এই ভেন্যুতে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একেবারে গা ঘেঁষে দুটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম দেশের আর কোথাও নেই। এই দুই স্টেডিয়াম ঘিরে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ার কাজও শুরু হয়েছে, যেখানে থাকবে আউটার স্টেডিয়াম, একাডেমি, ডরমেটরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু। আউটার স্টেডিয়ামের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে জায়গা বরাদ্দও মিলেছে। ৪০ জনের আবাসন সুবিধাসহ একটি ডরমেটরি তৈরি করে দেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে পাওয়া জায়গায় দ্বাদশ শ্রেণি অবধি পড়াশোনার জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে সিলেট সিটি করপোরেশন। বিসিবি পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল জানান, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম লর্ডসের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি দেশের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়াম। এখানে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ার কাজ চলছে। সব কাজ শেষ হলে এটিই হবে দেশের প্রথম ক্রিকেট কমপ্লেক্স।

সর্বশেষ খবর