বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় খুন

হত্যার পর উপড়ে ফেলা হয় চোখ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮ জুন গ্রেফতার হয়েছিলেন মো. রাজন হোসেন (৩১) নামে এক যুবক। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার ধারণা ছিল, গ্রেফতারের পেছনে ব্যবসায়ী সাইফুলের হাত রয়েছে। রাজন ১৯ জুলাই কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়েই সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার এ পরিকল্পনায় সায় দেয় জানে আলম ও সুমন। তাদের ধারণাও ছিল, তাদের গ্রেফতারেও সাইফুলের ইন্ধন ছিল। ব্যবসায়ী সাইফুল সম্প্রতি বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে তার আগেই ৩০ জুলাই নৃশংসভাবে খুন করা হয় সাইফুলকে। হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মূল ঘাতক রাজনসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব বলছে, সাইফুলকে নৃশংসভাবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রাজন হোসেন। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- জানে আলম (৩৬), মো. সুমন ওরফে গর্দা সুমন (২৫), লিটন হোসেন (২৬), মো. দিপু (২৩), সরোয়ার আকন্দ (২৬) এবং মো. সজীব (২৯)।

নিহত সাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। সাতপাখি রোডে কাপড়ের ব্যবসা করতেন তিনি। গ্রেফতাররাও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন। ৩০ জুলাই রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় সাইফুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার চোখও উপড়ে ফেলে ঘাতকরা। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। খন্দকার আল মঈন বলেন, সাইফুল এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিলেন। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও মাদক কারবার সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সহায়তা করতেন। এসব কারণে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মাদক কারবারি ও অন্যরা সাইফুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতাররা হত্যার পরপরই এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করে। র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর অভিযানে তাদের রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত সুচালো লোহার রড, একটি ভাঙা ক্রিকেট ব্যাট, একটি ব্যাটন ও ছয়টি মোবাইল ফোন।

যেভাবে হত্যা : র‌্যাব জানায়, রাজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ পাঁচটির বেশি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার জানে আলম রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ চারটির বেশি মামলা রয়েছে। হত্যার সময় সাইফুলকে ব্যাটন দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন জানে আলম। গ্রেফতার সুমন কাঠ কাটা শ্রমিকের কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটির বেশি মামলা রয়েছে। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে রাজনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন সুমন। তিনি সাইফুলকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মাথায় গুরুতর জখম করেন। লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব লাঠি ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র দিয়ে সাইফুলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর