বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

নিতম্বের সুঁই বের করতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে ছয় মাস বয়সের এক শিশুকে অচেতন করে অস্ত্রোপচার করার সময় হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর বান্দ রোডের বেসরকারি রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবার তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের ভুলের বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ করলেও আইনের আশ্রয় নেয়নি। ঝুঁকি নিয়েই শিশুটির অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। শিশুর পরিবার কোনো অভিযোগ করবে না মর্র্মে থানায় লিখিত দিয়ে তার মরদেহ নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শিশু তানজিম খান পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে। তানজিমের মামা মো. রাকিব জানান, খেলার সময় অসাবধানতাবশত তানজিমের নিতম্বে ছোট একটি সুই ঢোকে যায়। স্থানীয়ভাবে এক্সরে করে সুই ঢোকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শিশুটিকে ডাক্তার দেখাতে পটুয়াখালী নিয়ে যান তারা। সেখানের চিকিৎসকরা শিশুটিকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে নিয়ে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। গত সোমবার শিশুটিকে নিয়ে অভিভাবকরা শেরেবাংলা মেডিকেলে গেলে ডা. তৌহিদুল ইসলাম তাদের আগরপুর রোডের মিডটাউন হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। পরবর্তীতে মিডটাউন হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ভালো ব্যবস্থা নেই জানিয়ে ডা. তৌহিদ শিশুটিকে বান্দ রোডের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান। মেশিনে অপারেশন করার শর্তে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে দুপুরে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। বিকালে শিশু তানজিমের মৃত্যুর খবর জানাজানি হয়।

তানজিমের মামা রাকিব শিশুটির সঙ্গে অস্ত্রোপচার থিয়েটারে ছিলেন। তার অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের জন্য তানজিমের শরীরে সাত-আটবার ইনজেকশন দেওয়া হলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। বিষয়টি তাদের নজরে আনার চেস্টা করেছি। তারা হাসি-তামাশা করছিল। শিশুটির বাবা ফিরোজ খান বলেন, মেশিনে অস্ত্রোপচার করার কথা বলে তারা হাতে করেছে। ভুল চিকিৎসায় শিশুটিকে হত্যা করেছে বলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাদের সামনে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার মৌখিক অভিযোগ করেন ফিরোজ খানসহ অন্যরা। অস্ত্রোপচারের আগে এনেসথেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করেন ডা. মনিরুল ইসলাম এবং সার্জন ডা. তৌহিদুল ইসলাম করেন অস্ত্রোপচার। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডা. তৌহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এনেসথেসিয়া দেওয়া চিকিৎসক ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, ছয় মাস বয়সের একটি শিশুকে অজ্ঞান করা ঝুঁকিপূর্ণ। তার অস্ত্রোপচারও জরুরি ছিল। ঝুঁকি নিতে হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। অস্ত্রোপচারের শেষ মুহূর্তে শিশুটির হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুল হক।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে ফজলুল হক বলেন, শিশু তানজিমের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো অভিযোগ নেই মর্মে পুলিশের কাছে লিখিত দিয়ে রাতেই তার মরদেহ স্বজনরা বাড়ি নিয়ে গেছেন।

সর্বশেষ খবর