বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভুল লাশ দাফনের তথ্য বেরিয়ে এলো সিআইডির ল্যাবে

মাহবুব মমতাজী

সাগর নাথ ও হিলটন নাথ আপন দুই ভাই। তাদের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পশ্চিম টিলা গ্রামে। তারা দুজন সঙ্গীসহ গত ৭ এপ্রিল রাত ১০টায় ট্রলার নিয়ে খুলনার পশুর নদীতে মাছের পোনা ধরতে যান।

এ সময় অবৈধভাবে মাছ ধরার কারণে করমজল ও চাঁদপাই রেঞ্জের বনবিভাগ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বন বিভাগ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।

সাগর ও হিলটনের মা বিথীকা নাথ ধারণা করেন, তার ছোট ছেলে হিলটন নাথকেও বন বিভাগ গ্রেফতার করে অন্যদের সঙ্গে আদালতে পাঠিয়েছে। কিন্তু তিনি তার বড় ছেলে সাগর নাথের কাছ থেকে জানতে পারেন- হিলটন নাথকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা আটক করেননি এবং তাদের সঙ্গে আদালতে পাঠায়নি। হিলটন নাথ বাড়িতেও ফিরে আসেননি। উদ্বিগ্ন মা ও তার স্বজনরা হিলটন নাথের খোঁজ করতে থাকেন।

সাত দিন পর ১৩ এপ্রিল দাকোপ উপজেলার করমজল এলাকার পশ্চিম-উত্তর কোণের ওয়াচ টাওয়ার থেকে ৭০ গজ দূরে একটি অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়।

দাকোপ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মা বিথীকা নাথ লাশের কাপড়-চোপড় দেখে তার ছোট ছেলে হিলটন নাথ বলে শনাক্ত করেন। একই সঙ্গে লাশ নেওয়ার জন্য মা দাবি করেন। এ মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য দাকোপ থানা পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ ছাড়া ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করা হয়। পরে লাশ বিথীকা নাথের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা নিজ ধর্মীয় রীতি মেনে লাশের সৎকার করেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একই জেলার মোংলা উপজেলার সেলাবুনিয়া গ্রামে মাহে আলম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। গত ১০ এপ্রিল ওই নিখোঁজের ঘটনায় তার ছেলে সুমন রানা দাকোপ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজ ব্যক্তির বর্ণনা অনুযায়ী- দাকোপ থানা পুলিশ করমজল এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটির কাপড়-চোপড় ও ছবি সুমন রানাকে দেখায়। এ সময় সুমনা রানা লাশটি তার পিতার বলে শনাক্ত করে লাশ দাবি করেন। দাকোপ থানা পুলিশ উভয় দাবিকারীকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে পাঠায়। দাকোপ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিন গতকাল বলেন, আমরা এখনো রিপোর্ট হাতে পাইনি। তবে শুনেছি ডিএনএ পরীক্ষায় ওই লাশ সুমনের বাবার বলে প্রমাণিত হয়।

এখন মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ডিএনএ ল্যাব সূত্র জানায়, উভয় পক্ষের ডিএনএ প্রোফাইলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় করমজল থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটি সুমন রানার পিতার বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ডিএনএ পরীক্ষায় মাধ্যমে সৎকার হওয়া ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন করেছে সিআইডি। তবে দাকোপ থানা পুলিশ বলছে, হিলটন নাথকে না পাওয়ায় আরেকটি রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সে কোথায় এবং কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর