বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেট নগরজুড়ে মরণফাঁদ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট নগরজুড়ে মরণফাঁদ

সিলেট মহানগরজুড়ে ‘হাঁ’ করে আছে মরণফাঁদ। উন্মুক্ত ড্রেন নামক এ মরণফাঁদে পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেলে বেড়ে যায় দুর্ঘটনা। তখন সড়ক দিয়ে চলাচল হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। দিনের বেলায় ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়েও স্থানে স্থানে ভাঙাচোরা ও উন্মুক্ত ড্রেনের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। মহানগরীর প্রায় সাড়ে ১৩ শ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে ১১ শ কিলোমিটারই উন্মুক্ত। এ উন্মুক্ত ড্রেনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, খুব শিগগির এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সব ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসাতে হলে একদিকে যেমন বিপুল অর্থের প্রয়োজন, অন্যদিকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে পোহাতে হবে ঝামেলা। সূত্র জানান, বর্ধিত ১৫টিসহ ৪২টি ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকা। এর মধ্যে পুরনো ২৭টি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের ৯৬৮ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে; যার মধ্যে ৫৮০ কিলোমিটার পাকা ও ২৩০ কিলোমিটার কাঁচা। কাঁচা ড্রেনের কোথাও স্ল্যাব নেই। আর অর্ধেকের বেশি পাকা ড্রেন উন্মুক্ত। রাস্তার পাশে এই ড্রেন যেন ‘হা’ করে ওঁৎপেতে আছে দুর্ঘটনার জন্য। সিসিকের প্রকৌশল শাখার হিসাব অনুযায়ী পাকা ড্রেনের মাত্র ২৩০ কিলোমিটারের ওপর রয়েছে স্ল্যাব। এগুলোও স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে। স্ল্যাব ভেঙে দুর্ঘটনার আরও বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ড্রেনগুলো। এ ছাড়া সিসিকের হিসাব অনুযায়ী নতুন সংযুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডে রয়েছে ৩৮০ কিলোমিটার ড্রেন। এসব ড্রেনের পুরোটাই কাঁচা ও উন্মুক্ত। অর্থাৎ সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২ ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ড্রেনের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৫৮০ কিলোমিটার পাকা ও ৭৬৮ কিলোমিটার কাঁচা। আর স্ল্যাব যুক্ত ড্রেনের দৈর্ঘ্য ২৩০ কিলোমিটার ও উন্মুক্ত রয়েছে ১ হাজার ১১৮ কিলোমিটার। সূত্র জানান, সিলেট মহানগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর পাশের ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসিয়ে ফুটপাত তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে এ ড্রেনগুলো ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কবারের জন্য স্ল্যাব তুলে রাখা হলেও কাজ শেষে সেগুলো আর প্রতিস্থাপন করা হয়নি। ফলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

আর বৃষ্টি হলেই ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায় উন্মুক্ত ড্রেনগুলো। জলাবদ্ধতার কারণে ড্রেন ও রাস্তা পানিতে একাকার হয়ে যায়। ফলে যানবাহন নিয়ে চলাচল কিংবা পায়ে হাঁটতে গিয়ে উন্মুক্ত ড্রেনে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে এরকম দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এক কবির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই সাংবাদিকসহ নগরীর বেশ কয়েকজন নাগরিক। এরপরও এ নিয়ে টনক নড়েনি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের। উন্মুক্ত ড্রেনে স্ল্যাব বসানো কিংবা ভাঙাচোরা স্ল্যাব মেরামতে খুব বেশি উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি তাদের। বরং ড্রেন নিরাপদ করার চেয়ে ফুটপাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই মনোযোগী বেশি সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ড্রেনে স্ল্যাব বসানোর সুবিধা-অসুবিধা দুটিই আছে। ড্রেনজুড়ে স্ল্যাব বসালে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে বেগ পেতে হয়। অনেক সময় ময়লায় ড্রেন ভরে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে এটাও সত্য যে, স্ল্যাব থাকলে রাস্তাঘাট থেকে ময়লা-আবর্জনা কম পড়ে। স্ল্যাবের ওপর দিয়ে মানুষ হাঁটাচলা করতে পারে।

নূর আজিজুর রহমান আরও জানান, সিসিকের পুরনো ২৭ ওয়ার্ডে এখনো সব ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসানো সম্ভব হয়নি। আর নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এগুলোয় যখন সড়ক সম্প্রসারণের কাজ হবে তখন নতুন করে ড্রেন নির্মাণ করা হবে। একসঙ্গে পুরো নগরীর ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসাতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন; যা সিটি করপোরেশনের হাতে নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর