শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পারিবারিক কলহের বলি শিশুসন্তান

♦ কলহের কারণ অভাব ও পরকীয়া ♦ ছয় মাসে পারিবারিক বলয়ে ৩০ শিশু হত্যা ♦ গর্ভবতী মায়েদের কাউন্সেলিং দেওয়ার পরামর্শ

জিন্নাতুন নূর

পারিবারিক কলহ, আর্থিক অসচ্ছলতা, পরকীয়া ও সম্পত্তি ভাগাভাগিসহ বেশকিছু কারণে সাম্প্রতিক সময়ে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হচ্ছে। আর পারিবারিক কলহের জেরে শিশুসন্তানদের হত্যা করছেন মা-বাবা। কিছু ঘটনায় শিশুসন্তানকে হত্যা করে মা-বাবা নিজেও আত্মহত্যা করছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের এ ভয়াবহতা প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী মায়েদের সন্তান জন্মদানের আগে কীভাবে সন্তান লালন-পালন করতে হবে সে বিষয়ে কাউন্সেলিং নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজের সন্তান হত্যাসহ একজন ব্যক্তির আত্মহত্যা করার মতো অপরাধ রোধে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করতে হবে বলে পরামর্শ তাদের। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যে, চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে পারিবারিক বলয়ে ৩০ জন শিশুকে হত্যা করা হয়। আর এ শিশুদের মধ্যে ২২ জনের বয়স ছয় বছরের নিচে। সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে ছয়জন শিশুকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে একশ্রেণির মানুষের কাছে প্রচুর অর্থ। আবার একশ্রেণি একেবারেই নিঃস্ব। সাধারণত দেশে বাবারা উপার্জনের জন্য বাইরে থাকেন আর বাড়িতে সন্তান প্রতিপালন করেন মা। যখন একজন মা শিশুর খাওয়াসহ বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে পারেন না, তখন তাদের কেউ কেউ এ ধরনের অপরাধ ঘটান। আবার সন্তান কীভাবে প্রতিপালন করতে হয় সে শিক্ষা বেশির ভাগ মায়েদের মধ্যে নেই। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে মায়েদের অনেকের মধ্যে এখন এক ধরনের হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন প্রচ দাম্পত্য কলহ হয় তখন এর প্রধান শিকার হয় তাদের শিশুসন্তান। যে নারীরা গর্ভে সন্তান ধারণ করেন তাদের নিজেদের শারীরিক চেকআপের পাশাপাশি একই সময় সন্তান কীভাবে লালন-পালন করতে হবে সে বিষয়ে কাউন্সেলিং করতে হবে।

২২ জুলাই নেত্রকোনায় পারিবারিক কলহের বলি হয় পাঁচ মাসের শিশু আরিয়ান। শিশুটির মা নিজ সন্তানকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছেন। জেলার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের চৈয়ারগাতী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটির মা পান্না আক্তার ও বাবা জিহাদ মিয়ার মধ্যে পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে কলহ দেখা দেয়। এর জের ধরে পান্নার স্বামী ও শাশুড়ির মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এরপর পান্না তার স্বামী ও শাশুড়িকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আরিয়ানকে গলা টিপে হত্যা করে বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে ফেলে দেন। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার পান্না পুলিশের কাছে সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক দিনের শিশুসন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন কল্পনা রানী বর্মণ নামে এক মা। এ ঘটনায় করা মামলায় কল্পনাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২১ জুন উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের দরবস্ত গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, পারিবারিক কলহের কারণে আট বছর ধরে স্বামী দেবেন্দ্র নাথ ও স্ত্রী কল্পনা রানী বর্মণ আলাদা বাড়িতে থাকতেন। কল্পনা রানী বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় এই সন্তানের জন্ম হয়। ফলে নবজাতকটিকে তিনি হত্যা করেন। এ মামলায় গ্রেফতার করে কল্পনা রানীকে আদালতে তোলা হলে তিনি নবজাতক হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ছাড়া প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে ঝগড়া করে ৮ জুন কুমিল্লার বুড়িচংয়ে জান্নাত আক্তার নামের এক নারী নিজে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর আগে তার পেঁচিয়ে নিজের চার বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে হত্যা করেন তিনি। পুলিশ ধারণা করছে, এ ঘটনাটিও পারিবারিক কলহের জেরে ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর