শিরোনাম
শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আল-কায়েদা হতে চায় আনসার আল ইসলাম

টার্গেট কিলিংয়ের তালিকায় পুলিশ বিচারক লেখক মুক্তমনা ব্লগার সংবাদ পাঠক মিডিয়াকর্মী ট্রান্সজেন্ডার এলজিবিটি কর্মীসহ সেক্যুলার চিন্তা করেন এমন ব্যক্তি, হিন্দাল শারক্বীয়া নিষিদ্ধ করল সরকার

সাখাওয়াত কাওসার

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার মতো সংগঠন গড়তে চায় আনসার আল ইসলাম। নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে টার্গেট কিলিংয়ের মতো ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। দেশের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা মাওলানা ওসমান গনি ওরফে আবু ইমরান নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে নিয়ে এমন ভয়ংকর পরিকল্পনা করছেন। প্রয়োজনে আরও জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের নতুন এই মোর্চায় আহ্বান জানানোর বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে তাদের। রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে ২৩ জুন স্ত্রীসহ শারক্বীয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শামীন মাহফুজ গ্রেফতার হওয়ার পর দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তাদের দেওয়া কোনো তথ্যই আমরা হালকাভাবে নিই না। আরও যাচাই-বাছাই চলছে। যে কোনো অপতৎপরতা রুখতে সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করছি।’ কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সূত্র বলছে, ওসমান গনি ও শামীন মাহফুজের মধ্যে কয়েক মাস ধরে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। নতুন মোর্চার বিষয়ে শামীন নিজে দায় না নিলেও এটা তাদের যৌথ চেষ্টার ফসল হতে যাচ্ছে। আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মতোই চলাফেরা করতে চেয়েছিলেন শামীন মাহফুজ। তিনি সার্বক্ষণিক দুজন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করতেন পার্বত্যাঞ্চলের গহিন পাহাড়ে। সেখানে গড়ে তোলেন ক্যাম্প। বিদেশি জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। একিউআইএসের অন্যতম প্রোপাগান্ডা প্রচারের উৎস উম্মাহ নেটওয়ার্কে শাইখ তামিম আল আদনানির সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। তিনি তামিমের জন্য স্ক্রিপ্ট তৈরি করেও পাঠিয়েছেন। উম্মাহ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একিউআইএস দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রোপাগান্ডা প্রচার করছে। জানা গেছে, ‘আমিই আল-কায়েদা, আমিই বাংলার ওসামা বিন লাদেন’- এমন তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন শামীন মাহফুজের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইসে। এগুলোতে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি শীর্ষ অনেক জঙ্গি নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তিনি ও তার দল আল-কায়েদার মতাদর্শে বিশ্বাসী। আল- কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকনটিনেন্টের (একিউআইএস) সহযোগী হিসেবে তিনি একটি সামরিক গ্রুপ তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। প্রতি মাসে তিনি আনসার আল ইসলামের কেন্দ্রীয় ফান্ড থেকে ২০ হাজার টাকা পেতেন। জিজ্ঞাসাবাদে শামীন মাহফুজের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, হিন্দাল শারকীয়ার পরিকল্পনা ছিল আনসার আল ইসলামের মতোই টার্গেট কিলিং। তারা পুলিশ, বিচারক, নাস্তিক লেখক, মুক্তমনা ব্লগার, সংবাদ পাঠক, মিডিয়াকর্মী, নাট্যকর্মী, ট্রান্সজেন্ডার, এলজিবিটি কর্মীসহ সেকুলার চিন্তা করেন এমন ব্যক্তিদের তালিকাও করেছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য জামাতুল আনসার ইসলামিক রিসার্চ অ্যানালাইসিস উইং (আই-র) নামে শাখাও খুলেছিল। একাধিক সূত্র বলছে, ২০০৬ সালে প্রথম জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন শামীন। প্রথমে তিনি জামাতুল মুসলেমিনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এরপর জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) হয়ে কাজ করেছেন। এরপর যোগ দেন আনসার আল ইসলামে। এর শীর্ষ নেতা মাওলানা ওসমান গনি ওরফে আবু ইমরানের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। শামীনকে ২০১৪ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একবার গ্রেফতার করেছিল। ওই সময় তিনি প্রায় চার বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে পরিচয় হয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-বাংলাদেশের (হুজিবি) নেতা মাওলানা আবু সাঈদের সঙ্গে। আবু সাঈদের পরামর্শেই নতুন জঙ্গি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করেন শামীন। ২০১৮ সালে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে জামাতুল আনসার গড়ে তোলেন তিনি। শামীন একজন ভয়ংকর ব্যক্তি। স্ত্রী নাজনীন ছিলেন আনসার আল ইসলামের ইজাজ কারগিলের স্ত্রী। যিনি কারগিল যুদ্ধে ড্রোন হামলায় মারা যান। ইজাজ পাকিস্তান চলে গেলে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেন শামীন। তার স্ত্রীও নারীদের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শামীন মাহফুজ গবেষণার কাজে অনেক আগে থেকেই পার্বত্যঞ্চলে যাতায়াত করতেন। পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিনের নেতা নাথান বমের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বন্ধুত্ব হয়েছিল। সেই সূত্রে ২০১৯ সাল থেকে পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন শামীন। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শামীনকে ২০১১ সালেও বান্দরবানে জিহাদি বইপত্রসহ একবার গ্রেফতার করেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ওই সময় তিনি পাহাড়ে জমি বরাদ্দ নিয়ে কৃষি খামারের আড়ালে জঙ্গি আস্তানা তৈরি করছিলেন। সেই সূত্র ধরে ২০১৯ সালে নতুন করে আবারও পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলেন গাইবান্ধার বাসিন্দা এই শীর্ষ জঙ্গি নেতা।

নিষিদ্ধ হলো হিন্দাল শারক্বীয়া : ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামক জঙ্গি সংগঠনটির ঘোষিত কার্যক্রম দেশের শান্তিশৃঙ্খলা পরিপন্থী। এরই মধ্যে সংগঠনটির কার্যক্রম জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচিত হওয়ায় বাংলাদেশে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর