শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজ চক্রে জিম্মি অটোরিকশা

♦ মাসে ২ কোটি টাকা চাঁদা আদায় ♦ স্টিকারপ্রতি নেয় ২-৩ হাজার টাকা ♦ স্পট ভাড়া ৪০-৮০ টাকা

হাসান ইমন

চাঁদাবাজ চক্রে জিম্মি অটোরিকশা

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় স্টিকার লাগিয়ে টাকা ওঠায় একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ লেখা এই স্টিকারের আড়ালে প্রতি সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসে ২ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে চক্রটি। এই সড়কে চলাচল করা সাত-আট হাজার অটোরিকশা থেকে চক্রটি মাসে ২ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে। আবার কেউ টাকা না দিলে মারধরসহ অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গাড়ি ডাম্পিং করে চক্রটি। এই চাঁদাবাজ চক্রে জিম্মি অটোরিকশাচালকরা।

সরেজমিন ঘুরে এবং ভুক্তভোগী সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ এই স্টিকার ছাড়া কোনো সিএনজি অটোরিকশা বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুতে উঠতে পারে না। মঙ্গলবার জুরাইন পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু হয়ে ওপারের হাসনাবাদ ও ইকুরিয়া রোডে চলাচলরত অন্তত ২০ জন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, ওই স্টিকার দিয়ে প্রতি মাসে সিএনজিপ্রতি ২ হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। যাদের অটোরিকশার কোনো নম্বর নেই, তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা করে। ওই স্টিকার-সংবলিত অটোরিকশাগুলো শুধু জুরাইন পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু হয়ে ওপারের হাসনাবাদ ও ইকুরিয়া পর্যন্ত চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। ঢাকার ভিতরে এগুলোর চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া স্পট ভাড়া হিসেবে প্রতিদিন নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা।

চালকরা জানিয়েছেন, কম করে হলেও ৭ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু সড়কে। তারা বলেন, গত বছর ২৬ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর বুড়িগঙ্গা সেতুর টোল বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় সেতুর ইজারাদার ছিলেন আলম ওরফে দিগম্বর আলম। টোল বন্ধ হওয়ার পরই চক্রটি স্টিকার লাগিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন আক্তার। আক্তারের সঙ্গে রয়েছেন বাবু ও ফয়সাল নামে দুজন। তারা মাসের প্রথম সপ্তাহেই অগ্রিম টাকা দিয়ে স্টিকার দেন চালকদের। চালকরা বলেন, ‘সরকারি রাস্তায় এভাবে অবৈধভাবে চাঁদা তুলছে। আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ স্টিকার না নিলেই অটোরিকশা চালককে মারধর করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশের মাধ্যমে গাড়ি ডাম্পিং করে চক্রের সদস্যরা। পরে টাকা দিয়ে স্টিকার লাগিয়ে গাড়ি ডাম্পিং থেকে বের করে আনতে হয়।’ তারা আরও বলেন, ব্রিজের নিচে শ্যামপুর অংশে রয়েছে একটি অফিস, যেখানে বসেন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতারা। পাশেই অন্য অফিসে বসে এসব অটোরিকশার স্টিকার চাঁদার রসিদ সরবরাহ করা হয়। ওই অফিসে সাধারণের প্রবেশও নিষেধ। এদিকে ২৬ জুলাই ও ৭ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বরাবর অভিযোগ করেন ঢাকা জেলা ফোরস্ট্রোক অটোরিকশা সিএনজি ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ওমর ফারুক চৌধুরী। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা জেলা কেরানীগঞ্জ উপজেলার পোস্তগোলা ব্রিজ পারাপার এলাকায় প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এসব রিকশা থেকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা ও অবৈধ রিকশা থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদা আদায় চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন আক্তার, ফয়সাল ও বাবু। তারা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও বিশেষ করে পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় ডাম্পিংয়ের ভয় দেখিয়ে স্টিকার বিক্রি, স্পট ভাড়া ও মোড়ে মোড়ে চাঁদা আদায় করছেন। এর বাইরে চক্রটি রাজবাড়ী ৮০, কদমতলী ৭০, মোল্লাবাজার ও আবদুল্লাহপুর থেকে ৪০ টাকা করে স্পট ভাড়া আদায় করছেন তারা।

এ বিষয়ে মো. ওমর ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে স্টিকার লাগিয়ে মাসে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা ওঠায় আক্তার চক্র। স্টিকার না লাগালে চালককে মারধর এবং গাড়ি ডাম্পিং করে তারা। পরে টাকা দিয়ে স্টিকার নিয়ে গাড়ি বের করতে হয়। একই সঙ্গে স্পট ভাড়া, সিটি টোল, অবৈধ পার্কিং ভাড়াসহ প্রতিদিনই চালকদের থেকে শত শত টাকা আদায় করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করে অভিযোগ জানিয়েছি। দেখি পুলিশ কী ব্যবস্থা নেয়।’ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আক্তার বলেন, ‘কোথাও চাঁদা ছাড়া পরিবহন চলে না। সবখানে চাঁদা দিতে হয়। এটা পরিবহন-মালিকদের একান্ত বিষয়। তবে আমি কোনো স্টিকার দিই না। টাকাও নিই না। এ বিষয়ে যারা অভিযোগ করেছেন, তার সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’ জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিএনজি ড্রাইভার্স ইউনিয়নের দেওয়া অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষী যে-ই হোক না কেন অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর