শিরোনাম
রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে দুই চাচাতো ভাই বিএনপিতে তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

আওয়ামী লীগে দুই চাচাতো ভাই বিএনপিতে তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী

নৌকার শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কাজীপুর উপজেলা ও সদরের একাংশ নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-১ আসন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সেখানে নির্বাচনী মাঠও ততই গরম হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ভোটের প্রচারণায় আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে। আর বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার পাশাপাশি কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী এ আসন  থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তীতে প্রয়াত জাতীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম তাঁর পিতার এই আসন  থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর নাসিমপুত্র তানভীর শাকিল জয় উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনেও এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আরেক দাবিদার শহীদ এম মনসুর আলীর আরেক ছেলে প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিমের সন্তান। তাঁর নাম শেহেরিন সেলিম রিপন। মোহাম্মদ নাসিম ও  মোহাম্মদ সেলিমের দুই ছেলে অর্থাৎ দুই চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। প্রতিবারই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এই আসনে জয়লাভ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নৌকার বিজয় অব্যাহত রাখতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি অধ্যুষিত কয়েকটি ইউনিয়ন আসনটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দলটি চেষ্টা করছে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় ও তার চাচাতো ভাই প্রয়াত এমপি ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন মাঠে রয়েছেন। ইতোমধ্যে দুই ভাইকে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি টি এম নাজমুল হাসান রানা ও কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা। ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলটির সিরাজগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল মামুন ও কাজিপুর থানা সভাপতি জাফর আহমদ। এ ছাড়াও জাকের পার্টি ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর প্রার্থী দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিমপুত্র তানভীর শাকিল জয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাজীপুরের মানুষ বরাবরই শহীদ এম মনসুর আলী ও মোহাম্মদ নাসিমের ভক্ত এবং তাঁদের কাছে ঋণী। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মোহাম্মদ নাসিমের হাত ধরে যমুনার কবল থেকে কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ রক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ অঞ্চলে উন্নয়নের সুবাতাস বইতে শুরু করে। তিনি বলেন, কাজিপুর আসনে কাজিপুরের জনগণ মোহাম্মদ নাসিমের বিকল্প কিছু ভাবেননি। তেমনি বর্তমানে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয়ের বিকল্প হিসেবেও তারা কখনো কাউকে ভাবেন না। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় হলেই কিছু অতিথি পাখি নির্বাচনী এলাকায় ঘুরঘুর শুরু করেন। কিন্তু শেহেরিন সেলিম কোনোদিন কাজিপুরে আসেননি। এমনকি কাজিপুরের জনগণ তাকে চেনেও না, কোনোদিন দেখেওনি। জনগণের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিমপুত্র আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী শেহেরিন সেলিম রিপন বলেন, চাচা মোহাম্মদ নাসিম আসনটি থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আমার বাবা ড. মোহাম্মদ সেলিম একবার উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কাজিপুরের ভোটের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। পাঁচ বছরেই তার সততা ও নিষ্ঠার কারণে সাধারণ মানুষ ড. মোহাম্মদ সেলিমের মাঝে তাদের প্রাণের মানুষ শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে  মোহাম্মদ নাসিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ছিল না। ছেলে তানভীর শাকিল জয়ই সবকিছু নিযন্ত্রণ করতেন। পিতার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করায় প্রবীণ তৃণমূল নেতা-কর্মী অনেকেই কোণঠাসা ছিলেন। দীর্ঘ সময়ে মনসুর আলী পরিবারের প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তা অনেকটাই ছেদ পড়েছে। সেক্ষেত্রে সবার প্রত্যাশা দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন সঠিকভাবে জরিপ করে সাধারণ মানুষের মতামত প্রাধান্য দিয়ে নৌকার মনোনয়ন প্রদান করেন।

বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নাজমুল ইসলাম তালুকদার রানা ও সেলিম রেজা বলেন, দল ত্যাগী-নির্যাতিত ও কর্মীবান্ধব নেতাকে মনোনয়ন দেবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। কাজিপুরে বিএনপি অধ্যুষিত চারটি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে কাজিপুর আসনে বিএনপি বিজয়ী হবে বলে আমরা মনে করি।

সর্বশেষ খবর