রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আখের দাম বাড়িয়ে চিনির বাজার সহনীয় রাখার পরিকল্পনা

মিল গেটে প্রতি কুইন্টালে ১০০ টাকা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশি চিনিকলগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সরকার। চাইছে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে। এ লক্ষ্যে আখের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন

(বিএসএফআইসি)। গত ১০ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মিল গেটে প্রতি কুইন্টাল আখের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পর এখন তা কমে এলেও চিনির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। পণ্যটির দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। বর্তমানে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাবে গত এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ৫৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের বার্ষিক চিনির চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। এ কারণে বাজার মূল্য ঠিক করে দেয় আমদানিকারক মিল মালিকরা। এমন কি আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও সেই দাম কার্যকর করে না তারা। উপরন্তু ডলারের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে পণ্যটির

দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তদবির করে। এ পরিস্থিতিতে দেশি চিনিকলগুলো আখের দাম বাড়িয়ে বাজারে কতটা প্রভাব রাখতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

দেশি চিনিকলে উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে : গত মে মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সরকারি চিনিকলগুলো ২৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন উৎপাদন করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো ওই সময় পর্যন্ত ২১ হাজার ৩১৩ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছে- যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। আগের অর্থবছর ২৪ হাজার ৫০৯ মেট্রিক চিনি উৎপাদন হয়েছিল। অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি ১৫টি চিনিকলে ৮২ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছিল। পরের বছর থেকেই উৎপাদন দ্রুত কমতে থাকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল দেশি মিলগুলোতে। তবে অব্যাহত লোকসানের কারণে ওই সময়ে ছয়টি মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতেই দেশি চিনির উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে আসে। বাজারের পুরোটাই চলে যায় আমদানিকারক মিল মালিকদের হাতে।

আখের দাম বাড়িয়ে বাজার সহনীয় হবে কি : ১০ আগস্ট জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী চলতি ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুম থেকে আখের বর্তমান ক্রয়মূল্য মিল গেটে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা এবং বহিঃকেন্দ্রে প্রতি কুইন্টাল ৪৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৪০ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমের জন্যও আখের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএসএফআইসি। ওই মৌসুমে মিল গেটে প্রতি কুইন্টাল আখের দাম ৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা এবং বহিঃকেন্দ্রে প্রতি কুইন্টাল ৫৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৮৭ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে বিএফআইসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, উৎপাদন খরচের তুলনায় মিল গেটে দাম কম হওয়ায় কৃষকরা মিল গেটে প্রয়োজনীয় আখ সরবরাহ করছেন না। এ কারণে দাম বাড়াতে হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়বে না, বরং চিনিকলগুলোর লোকসান কমবে। আমরা যদি আখের ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে চিনি উৎপাদন করতে পারি তবে এটি লাভজনক হবে। বাজারে দেশি চিনির সরবরাহও বাড়বে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের চিনির প্রায় পুরোটাই চিনি আমদানিকারকদের হাতে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৫ শতাংশেরও কম উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে বিএসএফআইসির। ফলে সংস্থাটি আখের দাম বাড়িয়ে চিনির বাজারে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে না।

বরং সংস্থাটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে- এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত অর্থ সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে। এতে সরকারের দায় বাড়বে। আমাদের সুপারিশ হচ্ছে-  একমাত্র লাভজনক কেরু কোম্পানি রেখে, বাকি যেসব লোকসানি চিনিকল আছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এসব জায়গা ইপিজেড বা বেজার হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত যাতে সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে। এ ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে এমন একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা উচিত যাতে চিনি আমদানিকারকদের আমদানি মূল্য ও বিক্রয় মূল্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।

সর্বশেষ খবর