রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ভোটে খুনখারাবি নিয়ে মোদি-মমতার পাল্টাপাল্টি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভোটে খুনখারাবি নিয়ে মোদি-মমতার পাল্টাপাল্টি

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জুলাই মাসে যেসব খুনখারাবি হয়েছে, তার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করেছে বিজেপি। নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। সেই নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা উত্থাপন করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার বলেছেন, ‘রক্তের খেলা খেলেছে তৃণমূল’। মোদির বাক্যবাণের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও পাল্টা বলেন, ‘বাংলার মেধাকে মোদি ভয় পান বলেই বদনাম করছেন’। শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় ক্ষেত্রীয় পঞ্চায়েতি রাজ পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করেন মোদি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রমুখ।

মোদি বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কীভাবে খুনের খেলা খেলেছে তা দেশবাসী দেখেছে। নির্বাচনে এদের কৌশল হলো যে, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সময় না দেওয়া। খুব তাড়াতাড়ি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া যাতে বিজেপিসহ কোনো বিরোধী দল দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারে। এ জন্য যা যা করার দরকার, তারা সবটাই করবে। কেবল বিজেপি প্রার্থীদের ভয় দেখানোই নয়, এমনকি ভোটারদেরও হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিজেপি কর্মীদের পরিবারের যে লোকজন আছে তাদেরও বেঁচে থাকাটা কঠিন করে দেবে। ঘর থেকে বের হতে দেবে না। এরপর যখন ভোট হবে সেই ভোটের সময় তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দেবে। মোদি বলেন, ‘যারা নিজেদের গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তুলে ধরে, তারাই আজ ইভিএম থেকে মুক্তি পাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।’

মোদির ওই বক্তব্যের পরই এক অডিও বার্তায় মমতা বলেন, ‘নির্বাচনে যদি হিংসাই হতো তবে, ২ লাখ ৩১ হাজার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কীভাবে জমা পড়ল? যদি হিংসাই হতো তবে বিজেপি, কংগ্রেস বা সিপিআইএম মিলে এতগুলো পঞ্চায়েতে কীভাবে বোর্ড গঠন করল? যদি হিংসা হতো তাহলে আমাদের দলের ২০ জন লোক কেন মরল?’ মমতা বলেন, ‘বাংলার দিকে আঙুল তোলার আগে তার (মোদি) বলা উচিত যে, মণিপুর নিয়ে তিনি তিন মাস ধরে কি করেছেন? ত্রিপুরায় কেন ৯৩% মানুষকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হলো না? উত্তরপ্রদেশে কেন ৪০% মানুষকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি? প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘আপনার মতিগতি কি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। আপনার লক্ষ্য কেবল বাংলাকে বঞ্চনা করা, বাংলাকে ভাতে মারা, বাংলার বদনাম করা। কারণ আপনি বাংলার মেধাকে ভয় পান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আবুল কালাম আজাদ, বিরসা মুন্ডা এদেরকে আপনি ভয় পান। আমরা হিন্দু, মুসলিম, জৈন, পারসি, আদিবাসী সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করি, আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আর আপনাদের কাজ হলো, মণিপুরের মতো বাংলায়ও জাতি দাঙ্গা লাগানো। দার্জিলিংকে ভাগ করা, জঙ্গলমহলে আগুন জ্বালানো কিন্তু আমরা এই আগুন জ্বালাতে দেব না। উল্লেখ্য, রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের কার্যত ধূলিসাৎ করে জয়ী হয় শাসক দল। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ২২টি জেলা পরিষদের প্রত্যেকটিতে জয়ী হয় তারা। ৩ হাজার ৩১৭ গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ হাজার ৬৪১টি (৮০%) এবং ৩৪১ পঞ্চায়েতের সমিতির মধ্যে ৩১৩টিতে (৯২%) জয়ী তারা।

সর্বশেষ খবর