সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানি বাড়ছে তিন জেলায়

বন্যায় বিধ্বস্ত বহু সড়ক স্থাপনা ঘরবাড়ি

প্রতিদিন ডেস্ক

পানি বাড়ছে তিন জেলায়

দেশের কোথাও কোথাও বন্যার পানি নামতে থাকলেও সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে নদনদীর পানি বাড়তে থাকায় ফের বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া যেসব অঞ্চলে বন্যার পানি নামছে সেসব জনপদ থেকে বেরিয়ে আসছে ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র। দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিধ্বস্ত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, স্থাপনা এবং জনবসতি। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রংপুর : উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং অতিভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।

তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কায় নদীপাড়ের স্থানীয়দের সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এ ছাড়া ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি আগামী ১২ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। নদীর অববাহিকা, চর, দ্বীপচরের মানুষদের সতর্ক থাকাসহ প্রয়োজনে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যাওয়ার বার্তা পাঠিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢলে কয়েকদিন ধরে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নদীগুলোর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। গতকাল দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে ধরলা নদীর পানি সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৭৮ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ১ দশমিক ৪৩ মিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদে নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল ও চৌহালী উপজেলায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে যমুনার সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ নদী করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতী, বড়াল নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে চর এলাকাসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে ১২.৪৫ মিটার লেভেলে (বিপৎসীমা ১২.৯০ মিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুর পয়েন্টেও ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.১৫ মিটার লেভেলে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো বলছে, পানি আরও ৪-৫ দিন পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলে আবারও সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি তিন দিন ধরে বেড়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও চরাঞ্চলের নিম্নভূমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রোপা আমন ২৮৫ হেক্টর ও ৫০ হেক্টর সবজি খেত বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় ধরনের কোনো বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। গতকাল সকাল ৯টায় কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে ৭৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিদ্ধিরগঞ্জ : টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অধিকাংশ এলাকা। এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে নির্মাণাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ লেকও। এলাকাবাসীর দাবি, সিদ্ধিরগঞ্জের সৌন্দর্য বাড়ার জন্য লেকটি নির্মাণ করা হলেও অতিবৃষ্টিতে এটি কোনো কাজে আসছে না।

চট্টগ্রাম : টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশা হয়েছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বড় বড় খানাখন্দক তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। অনেক সড়কের পিচঢালাই উঠে গিয়ে মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক বন্যায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কের অনেক অংশে কার্পেটিংয়ের স্তর উঠে গেছে। আবার কোনো সড়কের মাঝখানের অংশ ভেঙে নালার মতো তৈরি হয়েছে। সেসব অংশে এখনো পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লোহাগাড়া সাতকানিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামের আনোয়ারা, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বান্দরবান : অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর গতকাল বিকাল থেকে আবার মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে বান্দরবান শহরে। এর আগের দিন শনিবার দুপুরের মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পুরোপুরি পানি নেমে যায়। কিন্তু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কাদা ঢুকে যাওয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছে না অনেক বন্যাদুর্গত পরিবার।

রাঙামাটি : রাঙামাটিতে কমেনি পানি। এখনো পানিবন্দি রয়েছে হাজারো পরিবার। মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৫ উপজেলার মানুষ। অন্যদিকে বন্যার পানি ও পাহাড় ধসে এখনো বিধ্বস্ত আছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-কাপ্তাই-রাজস্থলী ও রাঙামাটি-বান্দরবান সড়ক। ছোট ও হালকা যানবাহন চলাচল করলেও শুরু হয়নি ভারী যানবাহন চলাচল। এর চেয়ে বেশি নাজুক উপজেলার সড়কপথ। রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে বেশির ভাগ সড়ক।

সর্বশেষ খবর