সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

থেমে নেই দুর্ঘটনা

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ : ♦ রান্না ও পরিবহন কাজে বেশি দুর্ঘটনা ♦ দিনে দুটি দুর্ঘটনা ♦ লিকেজ থেকে বেশি দুর্ঘটনা

জিন্নাতুন নূর

গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে। ভয়ংকর এরকম দুর্ঘটনা কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ, দুর্বিষহ ক্ষত নিয়ে জীবন পার করছেন আহতরা। এরই মধ্যে গত শনিবার রাতে আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে পৃথক দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আশুলিয়ায় ছয়জন এবং নারায়ণগঞ্জে চারজন অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্য বলছে, গ্যাস সিলিন্ডার থেকে প্রতিদিন দেশে গড়ে দুটি দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণত রান্নার কাজ, যানবাহন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন ব্যবহারের কাজে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রান্না ও যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে দুর্ঘটনার হার বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এবং এর তদারকি না বাড়ালে প্রাণহানির ঘটনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঢাকার আশুলিয়ায় একটি টিনশেড বাসায় গত ১২ জুন রাতে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে আগুন ধরে ছয়জন পোশাক শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হন। আশুলিয়ার শ্রীপুরের নয়ানগর এলাকার একটি বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এ সময় আগুন বাড়িটির কয়েকটি রুমে ছড়িয়ে পড়ে। ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রণব চৌধুরী জানান, সিলিন্ডার গ্যাসের লিকেজ থেকে এ অগ্নিকা  ঘটেছে। একই দিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার হোসাইনি নগর এলাকার ছয়তলা ভবনের পাঁচ তলার একটি ফ্ল্যাটে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণের আগুনে চারজন দগ্ধসহ অন্তত ছয়জন আহত হন। ১২ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে আসলাম সিকদারের মালিকানাধীন লক্ষ্মী নিবাসে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন জানান, ধারণা করা হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাসের লিকেজ থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ভাটারার একটি বাসায় রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণের আগুনে এক দম্পতির মৃত্যু হয়। ভাটারার সাঈদনগরে এ ঘটনা ঘটে। ভাটারা থানার পুলিশ জানান, রান্নার সময় গ্যাসের সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে আবদুল মজিদ শিকদার ও তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য, ২০২২ সালে ৯৪টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বছর গ্যাসলাইন ও গ্যাস সিলিন্ডারের ৭৬৭টি অগ্নিকাে র ঘটনা ঘটে। এ হিসাবে গড়ে দিনে দুটির মতো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণেরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রাহকদের নিজেদেরই গ্যাস সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। গ্যাস লিকেজের মতো ঘটনায় গ্রাহকদের গা-ছাড়াভাবের কারণে অনেক সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। মাসে অন্তত একবার হলেও সবাইকে ঘরে গ্যাস লিক হচ্ছে কি না তা নিরাপত্তার স্বার্থে তদারকি করা প্রয়োজন। বিস্ফোরক পরিদফতরের তথ্য, এখন দেশে দেড় থেকে ২ লাখ মানহীন সিলিন্ডারযুক্ত গাড়ি চলছে। আবার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েও সিলিন্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যানবাহনের প্রায় ৮০ শতাংশ সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা ছাড়াই চলছে। যানবাহনে দুর্ঘটনার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার দায়ী। চাহিদা বেশি থাকায় দেশে অনুমোদনহীন সিএনজি কনভার্সন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেখানে অদক্ষ কারিগর দিয়ে সিএনজিচালিত গাড়ির রুপান্তর কার্যক্রম চলে। ফলে গাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আবার নিম্নমানের কম পুরুত্বের সিলিন্ডার দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে সিলিন্ডারের ভিতরে অনেক ক্ষয় হয়। এ ক্ষয় থেকেও মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের দুর্ঘটনার বড় কারণ মানহীন রেগুলেটর ও পাইপের ব্যবহার। সিলিন্ডারের বাল্ব কোম্পানিগুলো সরবরাহ করে। রেগুলেটর ও পাইপ গ্রাহক নিজে ক্রয় করে। এসব পণ্যের মান সম্পর্কিত কোনো নীতিমালা নেই। রেগুলেটরে ত্রুটির কারণে গ্যাস লিকেজ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার এলপিজি সিলিন্ডার অবৈধভাবে ভর্তি (ফিলিং) করার সময় নিম্নমানের সিলিন্ডার ও ভালভের ব্যবহার, ভুল ফিলিং পদ্ধতি ও বিভিন্ন ধরনের এলপিজি মেশানো হয়। ফলে বিভিন্ন রকম ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। আর এ ঝুঁকি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাে র অন্যতম কারণ। দেশে এলপিজি সিলিন্ডার অবৈধভাবে ভর্তি করার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে মানসম্মত হোস পাইপ ব্যবহারে নজর দিতে হবে। ‘গ্যাস ডিটেক্টর’-এর ব্যবহার দুর্ঘটনা রোধ অনেকাংশে রোধ     করতে পারে। 

সর্বশেষ খবর