সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুটি পোশাক কারখানা হঠাৎ বন্ধ ঘোষণায় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

ঢাকার সাভারে প্রাইড গ্রুপের দুটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন শ্রমিকরা। এতে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। গতকাল সাভারের উলাইল এলাকার এইচ আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং ফ্যাশন নিট লিমিটেড নামের দুটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকালে কারখানা দুটির ফটকে বন্ধের একাধিক নোটিস সাঁটিয়ে দেয়। প্রাইড গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনিরুল ইসলামের সই করা নোটিসে কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ‘চলমান বিবিধ সমস্যা এবং সাম্প্রতিক অরাজকতা কারখানার মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত হওয়ায় ১৩ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শ্রমিকদের জুলাই মাসের বকেয়া মজুরি কারখানা খোলার আগেই পরিশোধ করা হবে বলেও ওই নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।’

এদিকে শ্রমিকদের না জানিয়ে এবং জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ না করেই গতকাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় কিছুটা অসন্তোষ দেখা দেয়। একপর্যায়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। এতে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রমিকরা বলেন, ‘জুলাইয়ের বেতন না দিয়ে অবৈধভাবে কারখানাটি ১৯ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অবিলম্বে জুলাইয়ের বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়া হোক।’ বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে কারখানাটি থেকে সুতাসহ বেশ কিছু কাঁচামাল অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। এ কারণে শ্রমিকদের ভিতরে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করছিল। এর মধ্যেই গত ১১ আগস্ট শুধু স্টাফদের বেতন দিয়ে কারখানাটি একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। শ্রমিকরা বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পুলিশের মুখোমুখি হতে হয় শ্রমিকদের। তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশের পরিদর্শক আলতাফ হোসেন এক নারী শ্রমিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।’ শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কারখানাটি যে উপায়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তা পুরোপুরি অবৈধ। শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করার কোনো নিয়ম নেই।’ আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক আলতাফ হোসেন  বলেন, ‘কারখানা দুটি বন্ধ ঘোষণা করছে কর্তৃপক্ষ। সকালে প্রায় সাড়ে ৪০০ শ্রমিক কারখানার ফটকে এসে বন্ধের নোটিস দেখে চলে গেছে। কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এক নারী শ্রমিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিক নয় বলে দাবি করেন। কারখানার মহাব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল এবং মেসেজ পাঠিয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। কারখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যেই যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ করার চেষ্টা করবেন মালিক পক্ষ।’

সর্বশেষ খবর