মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
বন্যায় সরে গেছে পাথর বেঁকেছে স্লিপার, দ্রুত মেরামতে আশাবাদ

সেপ্টেম্বরেই ট্রেন কক্সবাজারে

আজহার মাহমুদ, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে

সেপ্টেম্বরেই ট্রেন কক্সবাজারে

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানির তীব্র স্রোতের ভয়ংকর থাবা পড়েছে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে। এর অনেক স্থানে পাথর সরে গেছে। কয়েকটি স্থানে দেবে গেছে স্লিপার। স্লিপারের নিচে থাকা কংক্রিটের বিটও কোথাও কোথাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। এতে উঁচু-নিচু দেখাচ্ছে রেললাইন। ছোট্ট শিশুদের লাফালাফিতেও তা কেঁপে উঠছে। সরেজমিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে গতকাল এমন চিত্র দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে স্বপ্নের ট্রেন চলাচল শুরুর কথা রয়েছে আগামী মাসে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছিল পুরোদমে। কিন্তু বাদ সাধে বন্যা। গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানির স্রোতে বেহাল দশা হয়েছে রেললাইনটির।

ফলে নির্দিষ্ট সময়ে রেল চালু নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও সংস্কার কাজ শেষে নির্ধারিত সময়েই এ রুটে রেল চলাচল উদ্বোধন সম্ভব, বলছেন রেল কর্মকর্তারা। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, বন্যায় রেললাইনের যে ক্ষতি হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যেই তা আগের অবস্থায় ফেরানো যাবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই রেল চলাচল উদ্বোধন হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। সমীক্ষা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা যেভাবে বলেছে সেভাবে লাইন বসানো হয়েছে। শত বছরের বন্যার রেকর্ড হিসাব করে ২০ ফুট উঁচু করে এ লাইন নির্মাণ হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেসব এলাকায় পাথর সরে গেছে তা পূরণ করে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৮৯ কিলোমিটারে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। বাকি ১১ কিলোমিটার লাইন বসাতে দ্রুতবেগে কাজ চলছে। বন্যার কারণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। বাড়তি লোকবল নিয়োগ করে নির্ধারিত সময়ে এ কাজ সম্পন্ন করতে চায় রেলওয়ে। বন্যায় এ রেললাইনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহুনি এলাকায়। ওই এলাকার কালিয়াইশ ও তেমুহুনি অংশে প্রায় ১ কিলোমিটার রেললাইনে স্লিপারের নিচের পাথর সরে গেছে। বেঁকে গেছে স্লিপার। কেরানীহাটের দক্ষিণাংশে এবং লোহাগাড়ার বিভিন্ন অংশেও কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। তেমুহুনি এলাকায় অন্তত ৫০টি স্পটে রেললাইনের নিচের পাথর সরে গেছে। কোনো কোনো স্পটে পাথর সরে ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত হয়েছে। এ রেললাইনটিতে পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে দাবি স্থানীয়দের। স্থানীয় ব্যবসায়ী দিদারুল আলম বলেন, বান্দরবান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রেললাইনের পূর্ব পাশে ফুলে উঠে। এক পর্যায়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে পানির তীব্র স্রোত তৈরি হয়। এ কারণে রেললাইনের ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় নুরুন নবী বলেন, গত ৬০ বছরে তিনি কখনো এমন বন্যা দেখেননি। এ এলাকায় ৩-৪ কিলোমিটারে কয়েকটি বড় বিল আছে। আগে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি দ্রুত নেমে যেত। রেললাইনের কারণে পানি নামতে পারেনি। তাই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। নুরুল সোবহান নামে আরেক বাসিন্দার অভিযোগ, ওই এলাকায় দেড় কিলোমিটার অংশে মাত্র তিনটি কালভার্ট দেওয়া হয়েছে। আরও তিনটি কালভার্ট দেওয়ার জন্য স্থানীয়রা আন্দোলনও করেছিল। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা শোনেনি বলেই এই দশা হয়েছে।

জানা গেছে, এ রেললাইনটি নির্মাণের বিষয়ে প্রথম আলোচনা আসে ব্রিটিশ আমলে। সে সময় সার্ভেও হয়। কিন্তু প্রকল্প এগোয়নি। এরপর পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২০০৮ সাল পর্যন্তও এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি ছিল না। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করছে। ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে ঘুমধুম, ১২৮ কিলোমিটারের এ প্রকল্প নেওয়া হয়। মিয়ানমারের আপত্তির কারণে ২৮ কিলোমিটারের কাজ এখনো শুরু হয়নি। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৮৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন। বাকি ১২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে সেপ্টেম্বরেই রেললাইন চালু করতে চায় রেলওয়ে।

সর্বশেষ খবর