মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রামেও মূল্যস্ফীতি সংকট

♦ জিনিসপত্রের দাম শহরের মতোই ♦ জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে

মানিক মুনতাসির

শহর ও গ্রামে জীবনযাত্রার ব্যয় এখন প্রায় একই রকম। বিশেষ করে মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামে তেমন কোনো তফাত নেই। তবে কিছু কৃষিপণ্য ও শাক-সবজির বেলায় একটু ব্যতিক্রম। সরকারি সংস্থা বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে জেলা শহরেও বাসা ভাড়া, বাস ভাড়াসহ বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস ও জ্বালানি খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। অথচ একটা সময় ছিল যখন শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে জীবন ধারণের খরচ ছিল অনেক কম। তখন শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ ছিল অনেক কম। বর্তমান সময়ে যারা নিজ বাড়িতে বসবাস করেন তাদের দুর্ভোগও কম নয়। এর অন্যতম কারণ সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতা ও ডলার সংকট। বিবিএসের পরিসংখ্যান মতে, জুলাই ২০২৩ এ গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং শহরে এই হার ৯ দশমিক ৪৩।

শহরের মতো গ্রামেও মূল্যস্ফীতি প্রকট হওয়া প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাদ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলে নিম্ন আয়ের মানুষকে। শহরের মতো এখন গ্রামেও মূল্যস্ফীতির চাপ অসহনীয়। মানুষের এই ভোগান্তি কমাতে হলে জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি আমদানি খরচ কমানো ও ডলার সরবরাহ বাড়াতে হবে। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। এ জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার আনাও জরুরি বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪। গত রবিবার বিবিএস মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থাকার কারণে মূল্যস্ফীতির উচ্চ চাপ নিয়েই নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছর শুরু হয়েছে। এই ধারা সারা বছরই অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই বাজেটে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও এমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। জানা গেছে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ০২ শতাংশ, যা বছরওয়ারি হিসাবে এক যুগের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের মাস, অর্থাৎ জুনে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৭৩। এর অর্থ হচ্ছে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অন্যদিকে এ মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জুন মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এদিকে ধসে পড়া অর্থনীতিকে ভালোভালে সামাল দিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে এনেছে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় তিন বছর ধরেই মূল্যস্ফীতির চাপ অসহনীয়। জানা গেছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের জুলাই মাসে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার এখন বাংলাদেশের চেয়ে ৩ শতাংশ কম। এদিকে দেশে ডলার সংকট এখনো চড়া অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। প্রতি ডলার এখনো ব্যাংকেই ১০৯ টাকা। ব্যাংকের বাইরে ১১৫ টাকারও বেশি। ডলার সংকট কমাতে শুধু রপ্তানি আয় আর রেমিট্যান্স বাড়িয়েও তেমন কোনো ফল হবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বরং সামষ্টিক অর্থনীতির সংস্কার করা জরুরি বলে তারা মনে করেন।

সর্বশেষ খবর