বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশে ক্যাবলসের বাজার ১২ হাজার কোটি টাকার

রাশেদ হোসাইন, হবিগঞ্জ থেকে ফিরে

দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে দেশীয় ক্যাবলস কোম্পানিগুলো। একটা সময় এ ক্যাবলস আমদানিনির্ভর থাকলেও এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি পরিকল্পনা করছে কোম্পানিগুলো। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্যাবলস বিক্রি হচ্ছে। এ খাতে শতাধিক কোম্পানিতে কর্মসংস্থান হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের। বিভিন্ন ধরনের ক্যাবলস বা বৈদ্যুতিক তারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাবলসের ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রায় ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আরএফএল। মিডিয়াম ভোল্টেজ বা হাই টেনশন (এইচটি) ক্যাবল তৈরি করতে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আরএফএল-এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১ লাখ ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের আলাদা কারখানা স্থাপন করেছে। আরএফএলের উৎপাদিত ক্যাবলস ‘বিজলী ক্যাবলস’ নামে বাজারজাত করা হয়। এ কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৩ সালে ডমেস্টিক ক্যাবল উৎপাদনের মাধ্যমে বিজলী ক্যাবলসের যাত্রা শুরু। এ পর্যন্ত বিজলী ক্যাবলস প্রায় ২২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে সরকার বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ওভারহেড কন্ডাক্টরের পরিবর্তে আন্ডারগ্রাউন্ড বা মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওভারহেড কন্ডাক্টর অপসারণ করে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। এর ফলে দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ব্যাপক হারে মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। চাহিদা বাড়ায় এখাতে নতুন বিনিয়োগ করছে বিজলী ক্যাবলস। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ক্যাবলস শিল্পের বিকাশে অন্যতম বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চ শুল্কহার। বাংলাদেশের ক্যাবলস শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর। কাঁচামালের আমদানি শুল্ক গড়ে প্রায় ৪০ ভাগ, অন্যদিকে ক্যাবলস আমদানি করলে গড়ে শুল্ক দিতে হয় ৪৫ ভাগ। এর ফলে আমাদের স্থানীয় শিল্প যেভাবে বিকাশ হওয়ার কথা, সেভাবে বিকশিত হচ্ছে না। দেশে বর্তমানে ব্যবহৃত ক্যাবলসের প্রায় ৩০-৩৫ ভাগ আমদানি করা হয়। দেশে ব্যবহৃত ক্যাবলসের প্রায় ৪০ ভাগ ডমেস্টিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়, আর প্রায় ৬০ ভাগ প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। আরএফএল গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, বিজলী ক্যাবলস নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব ক্যাবলস উৎপাদন করে থাকে। অত্যাধুনিক ইউরোপীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ কপার দিয়ে উৎপাদন করা হয়। স্পেক্ট্রোমিটার যন্ত্রের মাধ্যমে এর কপারের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্য এটিও সমৃদ্ধ অগ্নিপ্রতিবন্ধক পিভিসি ইনসুলেশন ব্যবহার করা হয়। বিজলী ক্যাবলসের কপারগুলোর কন্ডাক্টিভিটি ১০১ ভাগ, ফলে সঠিক মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ বিল কম হয়। বিজলী ক্যাবলসের ফ্যাক্টরি হেড মো. আবুল বাশার বলেন, বিজলী ক্যাবলসের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ ভাগ। বর্তমানে চারটি উৎপাদন কারখানা রয়েছে। এসবের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। বিজলী ক্যাবলসে বর্তমানে ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। ২০২১ সালে রপ্তানি শুরু করে বিজলী ক্যাবলস। বর্তমানে বিজলী ক্যাবলস ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে বিজলী ক্যাবলস রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর