বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সন্দেহ থেকে খুন স্ত্রীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফরিদপুরে স্ত্রী হত্যায় জড়িত অভিযোগে হাবুল বেপারি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, পরকীয়া সন্দেহে এনজিওকর্মী স্ত্রী রাবেয়াকে হত্যা করেন হাবুল। হত্যার পরিকল্পনায় হাবুলকে সহায়তা করেন তার দুলাভাই সূর্য মোল্লা। ১৩ আগস্ট ১২টা ২০ মিনিটে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী এলাকায় ঘরের পেছনে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে রাবেয়া বেগম নামে এক গৃহবধূর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় রাবেয়ার ভাই বাদী হয়ে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাত বছর আগে রাবেয়ার সঙ্গে হাবুলের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। দুজনেরই এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকে রাবেয়া বাবার বাড়িতে থাকতেন। কয়েক মাস ধরে স্ত্রীর প্রতি হাবুলের ক্ষোভ তৈরি হয়। রাবেয়া পরকীয়ায় জড়িয়েছেন বলে সন্দেহ করতেন তিনি। হাবুলের স্থায়ী কোনো কাজ ছিল না। তিনি মাঝেমধ্যে ফার্নিচারের দোকানে রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। আর রাবেয়া মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন একটি এনজিওতে। ফলে স্ত্রীর তুলনায় হাবুলের আয় কম ছিল।

যেভাবে হত্যা : পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১ আগস্ট রাতে হাবুল ও তার দুলাভাই রাবেয়ার বাড়িতে আসেন। তারা বাড়ির অন্যদের সঙ্গে একত্রে রাতের খাবার খান। রাত ১০টা ৩০ মিনিট সন্তানরা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এ সময় হাবুল, সূর্য মোল্লা ও রাবেয়া চেয়ারে বসে আলাপচারিতা করছিলেন। একপর্যায়ে হাবুল সুযোগ বুঝে অতর্কিতে রাবেয়ার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করেন। এ সময় রাবেয়ার হাত পেছন থেকে চেপে ধরেন হাবুলের দুলাভাই সূর্য। এরপর তারা রাবেয়ার হত্যা নিশ্চিত করেন। হত্যার বিষয়টি কেউ যেন জানতে না পারে সে জন্য রাবেয়ার লাশ গুম করতে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে টয়লেটের সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে ফেলে দেন তারা। হাবুলের দুলাভাই সূর্য রাতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান। হত্যার পরদিন সকালে হাবুলের কাছে রাবেয়ার ব্যাপারে জানতে চান রাবেয়ার মা। তখন হাবুল তাকে রাবেয়া এনজিওর কাজে অফিসে গিয়েছেন বলে জানান এবং শাশুড়িকে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। একপর্যায়ে হাবুল তার শাশুড়িকে জানান, জরুরি কাজে তাকে ঢাকা যেতে হবে। এই কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেন হাবুল। পরে তিনি বেশ কিছু সোনা ও রুপার অলঙ্কার এবং টাকা নিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান। এদিকে হাবুল বাড়ি থেকে চলে যাওয়ায় শাশুড়ির সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে এনজিও অফিসে ফোন করে তিনি জানতে পারেন অফিস বন্ধ এবং রাবেয়া অফিসে যাননি। পরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় রাবেয়াকে খোঁজাখুঁজি করেন। ১৩ আগস্ট বসতঘরের পেছনে টয়লেটের সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনা এলোমেলো দেখতে পেয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ঢাকনা সরিয়ে রাবেয়ার অর্ধগলিত লাশ দেখতে পাওয়া যায়।

 

 

সর্বশেষ খবর