বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্ধ হয় না শূন্য পাস

সব পরীক্ষার্থী ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ছেই

আকতারুজ্জামান

টাঙ্গাইলের সখিপুরে ইছাদিঘী দাখিল মাদরাসা থেকে চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২১ জন ছাত্র-ছাত্রী। ফলাফলে এই মাদরাসার কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। নওগাঁর পত্মীতলায় বড় বিদিরপুর দাখিল মাদরাসা থেকে এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ জন শিক্ষার্থী। এ প্রতিষ্ঠানেও কোনো ছাত্র-ছাত্রী পাস করতে পারেনি।

এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে দেখা গেছে ২০২৩ সালে দেশের ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করতে পারেনি, অর্থাৎ শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য। শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিংহভাগই মাদরাসা, যা পরিচালিত হয় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। শুধু চলতি বছরই নয় প্রতি বছরই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা মেলে যেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারে না। শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই এমপিওভুক্ত বলে জানা গেছে, যেখানে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, ২০২২ সালে এসএসসি ও সমমানে শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫০টি, ২০২১ সালে এর সংখ্যা ছিল ১৮টি, ২০২০ সালে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১০৪টি। এইচএসসির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০২২ সালের এইচএসসিতে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫০টি, ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫টি। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানে শতভাগ ফেল করা এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে যেগুলোতে একজন বা দুজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সাতক্ষীরায় জালালপুর ইউনিয়ন আদর্শ দাখিল মাদরাসা থেকে চলতি বছরে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মাত্র একজন ছাত্র। কিন্তু একমাত্র ছাত্রটিও ফেল করায় শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের খাতায় নাম লিখিয়েছে এই মাদরাসা।

এমনিভাবে মাত্র একজন পরীক্ষার্থী সেও ফেল করেছে এমন মাদরাসার মধ্যে রয়েছে একই জেলার কলারোয়ায় ক্ষেত্রপাড়া মহিলা দাখিল মাদরাসা, রাজশাহীর গোদাগাড়িতে বলিয়াদেয়াং ইসলাহুল মোসলেমিন দাখিল মাদরাসা, তানোরে ভাগনা মানিক কন্যা দাখিল মাদরাসা, কুষ্টিয়ায় বলিয়াপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, রংপুরের মিঠাপুকুরে নানকার দাখিল মাদরাসা ও যশোরে শ্রীপদী ঘোড়াগাছা দাখিল মাদরাসা।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকার অধীনে চলতি বছরে দুটি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী এসএসসিতে ফেল করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ঢাকা বোর্ডের অধীনে সবাই এসএসসিতে ফেল করেছে এমন প্রতিষ্ঠান ছিল দুটি। এর মধ্যে একটি এমপিওভুক্ত হলেও তা নিম্নমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত। এগুলোর অবকাঠামো ভালো নয়, প্রয়োজনীয় শিক্ষকও নেই, তাই শিক্ষার্থীও কম। আগামীতে তাদের যদি পরীক্ষার্থী সংখ্যা ও পাসের সংখ্যা সন্তোষজনক না হয় তবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, বছরের পর বছর শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করা গেলেও কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই কার্যকর ব্যবস্থা বা কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও বন্ধ করা হয়নি। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ বলেন, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, মন্ত্রণালয় থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে এমপিও বন্ধ করা না হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের স্বীকৃতি বন্ধ করা হয়েছে কাম্য পাস না থাকার কারণে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর