বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

এখনই আসছে না ডেঙ্গু টিকা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যেই ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যু ৪০০ ছাড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু। ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং মৃত্যু কমাতে আলোচনা চলছে ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে। এ বিষয়ে ভাবছে সরকার। তবে এ বছর আসছে না ডেঙ্গুর টিকা। দেশে টিকা তৈরি করতে বিভিন্ন দেশের তিন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কিউডেঙ্গা টিকা প্রস্তুতকারক জাপানের তাকিদা, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চকে আমরা ই-মেইল পাঠিয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ফর্মুলা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে দেশেই টিকা তৈরি করা সম্ভব। এই সক্ষমতা বিএসএমএমইউর রয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং ডব্লিউএইচও বলেছে, বর্তমানে ডেঙ্গুর যে দুটি টিকা প্রয়োগ হচ্ছে, এর একটি ফ্রান্সের বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্যানোফির তৈরি ‘ডেনভ্যাক্সিয়া’; অন্যটি জাপানের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাকেদার বানানো কিউডেঙ্গা। এসব টিকা বাজারজাতও হচ্ছে। অন্তত ২০টি দেশ প্রয়োগ করেছে। তবে সব বয়সীকে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে না। এসব টিকা অনুমোদন না দিলেও কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে ডব্লিউএইচও।

ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর জন্য কার্যকরী কোনো টিকা এখনো তৈরি হয়নি। এরপরও যে সব টিকা এখন ব্যবহার করা হচ্ছে, তার কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এর কোনোটিরই স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তিনি আরও বলেন, ‘ডেনভ্যাক্সিয়া’ টিকাটি বের করেছে ফ্রান্সের একটি ওষুধ কোম্পানি। কিন্তু এই টিকা সবাইকে দেওয়া যায় না। কিউডেঙ্গা হচ্ছে জাপানভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের ডেঙ্গু টিকা। এটিও ঢালাওভাবে সবাইকে দেওয়া যায় না। শুধু কিছু নির্দিষ্ট বয়সের বাচ্চাদের এ টিকা দেওয়া হয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই ইতোমধ্যেই টিকাটির ব্যবহার শুরু হয়েছে। যে দেশগুলো টিকাটি দিচ্ছে, তারা নিজ দায়িত্বেই দিচ্ছে। যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি নেই, তাই আমাদের দেশে এ ধরনের টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোতে টিকার প্রয়োগ হচ্ছে। ব্রাজিল দিচ্ছে; এ বছর ইন্দোনেশিয়া প্রয়োগের কথা জানিয়েছে। আবার ডেঙ্গু নেই এমন দেশও টিকা নিচ্ছে। এসব টিকার ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের বেশি এবং টিকা প্রয়োগের পর প্রায় ৯০ শতাংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও, তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ছে না। বাংলাদেশের মতো ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোর জন্য এসব টিকা হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। প্রতি ডোজে ২ হাজার ৬০০ টাকার মতো খরচ পড়বে।’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ফল ভালো হলে অনুমোদনের পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি প্রয়োগের পক্ষে নই। এমনকি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতেও যুক্ত করতে বলছি না। আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হোক।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও প্রশাসন) মো. সালাহউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে ডেঙ্গুর কোনো টিকা নিবন্ধিত নেই। বছরদুয়েক আগে প্রটোকল মেনে আইসিডিডিআরবি ট্রায়াল শুরু করেছিল, সেটা দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। দেশে টিকা আমদানি করতে গেলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন লাগবে। সরকার বা কেউ টিকা আনতে চাইলে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু টিকা পৃথিবীর সব দেশে ব্যবহারের অনুমোদন নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) অনুমতি পায়নি ডেঙ্গু টিকা। দেশে এ টিকা প্রয়োগের বিষয়ে টিকা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (নাইট্যাগ) যাচাই-বাছাই চলছে। সার্বিক পর্যালোচনা শেষে তারা মতামত দিলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাই এখন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ভেক্টর ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে।’ সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ‘দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হলেও এখনো ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে না। টিকার জন্য আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। এটি এখনো ডেভেলপিং পর্যায়ে আছে, পরিপূর্ণভাবে ডেভেলপ হয়নি। আমরা খোঁজ-খবর রাখছি।’ তিনি বলেন, ‘যে সব দেশ টিকা তৈরি করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। যখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো টিকার অনুমোদন দেবে আমরা সেই টিকা অবশ্যই আনার চেষ্টা করব। আমরা এখনো সে মানের কোনো ডেঙ্গুর টিকা পাইনি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখন পর্যন্ত কোনোটি অনুমোদন দেয়নি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর