শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুক্তিপণ আদায় করে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে উল্টো মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার হোসাইন আল মাসুম (৩৪) স্ত্রী জেসমিন আক্তার সীমাকে নিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে থাকেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী, বাসা বনশ্রীর এফ ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ২২ নম্বরে। তাদের সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ৩০ মে মাসুমের জীবনে বড় মোড় নেয়। পূর্বপরিচিত কয়েকজন তাকে অপহরণ করে। তার ওপর চালানো হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। অপহরণের পরদিন ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও রেহাই পাননি তিনি। উল্টো সাজানো মামলায় আসামি হয়ে জেল খেটেছেন। এখন আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ন্যায়বিচারের আশায়। মাসুমের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে করা মামলার নথি থেকে জানা গেছে।

আদালত সূত্র জানায়, মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (ঢামেক) পাঠানো হয়েছে। তবে গতকাল সিআইডিতে খোঁজ নেওয়া হলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, এখনো তারা মামলার কোনো কাগজপত্র পাননি। কাগজপত্র পেলে তদন্ত শুরু করা হবে। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ৩০ মে রাত ১১টায় বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর (তৎকালীন সময়ে সন্তানসম্ভবা) কিছু মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে ফেরার পথে মাসুমের সঙ্গে শামীম রহমানের দেখা হয়। এরপর সেখানে তাপসী নামে এক তরুণী আসে, যাকে শামীম বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে সেখান থেকে মাসুম বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ান। অল্প কিছুদূর এগোতেই একটি নিশান এক্সট্রেইল এবং টয়োটা এক্স করোল্লা গাড়ি তার পথরোধ করে। একটি গাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে শামীম তার সামনে দাঁড়ায়। এরপর তাপসী, অপু, রিমা, হান্নান ও বাবুসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। মাসুম বলেন, তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়িতে ওঠায় ও চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। তারা আমাকে শামীমের নিকেতনের অফিসের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে ইফতেখার উদ্দিন টুটুল নামে একজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায়। এ সুযোগে তাপসী আমার দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ও নগদ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। বেধড়ক মারধর করে শামীম আমার কাছে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এক পর্যায়ে আমি জীবনের ভয়ে তাদের কথায় রাজি হই। এরই মধ্যে তারা আমাকে কতগুলো খালি স্ট্যাম্প এবং সাদা কাগজে সই করায়। এরপর আমাকে ফোনটা হাতে দিয়ে টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। তখন টাকার বিষয়ে আমার পরিচিত বড়ভাই ফরহাদ রেজাকে জানাই। তিনি পরদিন ব্যাংক থেকে শামীমের অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ টাকা পাঠান। কিন্তু তারা আরও টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে। এরই মধ্যে আমার স্ত্রী নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ৩১ তারিখে খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। বিষয়টি টের পেয়ে শামীম, টুটুলসহ তাদের লোকেরা আমাকে নিকেতন থেকে মুন্সীগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানেও আমাকে অনেক মারধর করা হয়। এরপর তারা ২ জুন হাতিরঝিল থানায় বানোয়াট প্রতারণা মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ওই মামলায় আমি এক মাসের বেশি জেল খেটে ৪ জুলাই বের হই। জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আওলাদ হোসেন বলেন, প্রতারণার একটি মামলায় ২ জুন হোসাইন আল মাসুম নামে একজন গ্রেফতার হয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর