শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে

মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি মাছের বাজারে

রাশেদ হোসাইন

ঈদুল আজহার পর থেকেই রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার চাষের মাছ। দাম বেশি হওয়ার কারণে অস্বস্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। এমনকি মাঝারি পাঙাশ ও তেলাপিয়াও ২০০ টাকার নিচে মিলছে না। খামারি পর্যায়ে মাছ চাষিরা যে দামে মাছ বিক্রি করছেন, তার চেয়ে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে মাছের দাম বাড়ার কারণে তারাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। মাছের খামারিরা বলছেন, মাছের খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন, বিদ্যুৎ খরচ এবং শ্রমিকদের বাড়তি মজুরির জন্য মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু খামারিরা যে দামে বিক্রি করছেন, সে তুলনায় উচ্চহারে দাম বাড়িয়ে মাছের বাজার অস্থির করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা বলেন, পাইকাররা এসে পুকুর থেকেই মাছ কিনে নিয়ে যান। মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি রুই ও কাতলা ২৫০ থেকে ৩০০, তেলাপিয়া ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং পাঙাশ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করেন। আর এই মাছই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর শনির আখড়া, রায়েরবাগ ও যাত্রাবাড়ী বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঝারি ও বড় সাইজের তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং মাঝারি পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছের দাম ওজনভেদে ভিন্ন। এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর তিন কেজির বেশি ওজনের হলে দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতলা মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খামার পর্যায়ে মাঝারি ও বড় সাইজের তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় এবং পাঙাশ প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের রুই ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়, দুই-আড়াই কেজি ওজনের রুই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতলা মিলছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। রাজধানীর শনির আখড়া বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘কোরবানির ঈদের পর থেকেই আড়তে মাছের দাম চড়া। আমাদের এখন বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এর আগে লোডশেডিংয়ের সময় বরফের কারণে মাছের দাম বেড়েছে। শনির আখড়া বাজারে বিপ্লব সরকার নামের এক চাকরিজীবী বলেন, গত কিছুদিন ধরে মাছের বাজারে অস্বাভাবিকতা বিরাজ করছে। কোন মাছই ২০০ টাকার নিছে পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীতে ২৩ বছর ধরে আছি, এত বেশি দামে মাছ কিনতে হয়নি কখনো। আমার মনে হচ্ছে মাছের বাজারেও সিন্ডিকেট কাজ করছে। বিষয়টি সরকারের দেখা উচিত। মাছের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিশ ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হামিদুল হক বলেন, আজকে আমি তেলাপিয়া মাছ দুইটায় কেজি হয় এমন মাছ ১৭০ টাকা বিক্রি করেছি। আগামীকাল দেখা যাবে এ মাছ ঢাকা শহরে বিভিন্ন বাজারে ২৩০-২৪০ টাকা বিক্রি হবে। আমি সারা বছর মাছ চাষ করেও ১০ টাকা যেখানে লাভ করতে পারিনি সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মধ্যস্বত্বভোগারীরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এসব দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য আমি ঊর্র্ধ্বতন মহলে বলেছি আমাদের চাষিদের জন্য ঢাকার বাজারগুলোতে সরাসরি চাষিরা যেন বিক্রির সুবিধা পায়। এর ফলে মাছের দাম কমে আসবে, চাষিরাও লাভবান হতে পারবে আর ভোক্তারাও লাভবান হতে পারবে। এ ছাড়া মাছের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হলো মাছের খাবারের দাম বেড়েছে এবং খাবারের মান কমেছে। আগে যেখানে এক কেজি খাবারে হয়ে যেত এখন সেখানে দেড় থেকে দুই কেজি খাবারের প্রয়োজন পড়ে। অর্থাৎ খাবারের কোয়ালিটি কমেছে, দাম বেড়েছে। মাছের খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ বিল ও মজুরি খরচ বৃদ্ধির কারণে মূলত মাছের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর