শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

হতাশ বিনিয়োগকারীরা ছাড়ছে শেয়ারবাজার

আলী রিয়াজ

টানা দরপতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা ছাড়ছে শেয়ারবাজার। প্রতিদিন শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক কমছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। কয়েক মাস আগে হাজার কোটি টাকার ওপরে থাকা লেনদেন এখন ৩০০ কোটি টাকায় নেমেছে। প্রতিদিন শেয়ারের দর কমায় কেউ মুনাফা পাচ্ছে না। এমনকি বিনিয়োগ করা মূলধন থেকেও কমে যাচ্ছে নিজের টাকা। বাজারের এ পরিস্থিতিতে গত দেড় মাসে এক লাখের বেশি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব ছিল ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৪টি। সর্বশেষ ১৮ আগস্ট সে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৩টি। অর্থাৎ দেড় মাসের ব্যবধানে বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি। সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ১৩ লাখ ৬ হাজার। জুন শেষে এ সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৭টি। অর্থাৎ পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব কমেছে ৮৫ হাজার ৩৭৬টি। অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২২ হাজার ৭৬০টি। জুন শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৩২টি। এ হিসেবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে প্রায় ৩০ হাজার। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৬ হাজার ৪০৩টি। জুন শেষে এ সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৮৪৫টি। সে হিসেবে কোম্পানি বিও হিসাব কমেছে প্রায় ৫০০। বর্তমানে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৩১০টি; যা জুন শেষে ছিল ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৮২টি।

অর্থাৎ দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৫৫ হাজার ৪৭১টি। গত জুন শেষে এ সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৪৪৭টি। অর্থাৎ দেড় মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে প্রায় ১০ হাজার।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত দেড় মাস ধরে টানা দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গড় লেনদেন ছিল প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। জুলাই মাসের প্রথম দিকে সে ধারাবাহিকতায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গড় লেনদেন পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার ওপরে ছিল। ৭ জুলাই ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। ১১ জুলাইয়ের পর লেনদেন কমতে থাকে ডিএসইতে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। এ সময় বাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। সূচকের পতন হয়েছে একইভাবে। জুলাইয়ের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্ট। সর্বশেষ সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে। বাজারের এ টানা পতনে শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে উত্থান পতন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। সে কারণে অনেকে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে পারে। এ ছাড়া বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ে-কমে, এটাও একটি প্রক্রিয়া। বাজার এখন যে পর্যায়ে রয়েছে সবার উচিত বিনিয়োগ ধরে রাখা। ধরে রাখলে অবশ্যই ভালো মুনাফা পাবে সবাই।

সর্বশেষ খবর