শিরোনাম
রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দলের হিসাব প্রকাশে দ্বিধায় ইসি

এখনো হিসাব দেয়নি অর্ধেক নিবন্ধিত দল, সময় পাচ্ছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

গোলাম রাব্বানী

দলের হিসাব প্রকাশে দ্বিধায় ইসি

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গত বছর দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মতো নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের খাতওয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়ে ছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর আশার আলো দেখেনি। নির্বাচন কমিশন দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। দলের হিসাব প্রকাশের কথা জানিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, দলের অডিট রিপোর্ট কমিশনে যাচাই-বাছাই করার মতো লোকবল নেই। তবে দলের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করতে চান তারা। এ নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘অডিট করার ক্ষমতা ইসির নেই। এটা যাচাই করার মতো লোকবলও নেই। তবে অডিট রিপোর্ট আইন অনুযায়ী প্রকাশ করব।’ তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য চাইলেও তারা দিতে রাজি হননি।

তবে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘এটা (আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন) আমাদের কাছে জমা দেয় আইনগতভাবে। এই অডিট রিপোর্ট আমাদের কাছে একটা হেফাজত। সুতরাং এটা আমরা সবার কাছে প্রকাশ করতে পারি না।’

অন্যদিকে ২০১৬ সালে আদালত ছয় নাগরিকের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রায় দিয়েছিলেন- রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশে বাধা নেই। হাই কোর্টের সেই রায়ে বলা হয়েছিল, কোনো নাগরিক কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সেই দলের সম্মতি ছাড়াই তা প্রকাশ করতে পারবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নিবন্ধিত দলকে প্রতি পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিবন্ধিত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরীক্ষা করিয়ে পরের বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিতে হয়। পরপর তিন বছর কমিশনে এ প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের এখতিয়ার রয়েছে ইসির। ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালু হয়। ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর দলগুলো অডিট রিপোর্ট দিয়ে এলেও কয়েকটি দল প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে। তবে কোনো দলের ক্ষেত্রেই টানা তিন বছর অডিট রিপোর্ট জমা না দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সে কারণে পরপর তিন বছর অডিট রিপোর্ট দিতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের বিধান প্রয়োগের প্রয়োজন পড়েনি ইসির।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো এক যুগ ধরে নিজেদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী জমা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনে। অথচ তা প্রকাশ না হওয়ায় জনগণের জানার সুযোগ ঘটছে না। দলগুলো ইসিতে প্রতিবেদন জমা দিয়ে শুধু আয়, ব্যয় ও স্থিতির সংখ্যাটুকু জানিয়ে দেয় সংবাদমাধ্যমে। দলীয় ওয়েবসাইট কিংবা ইসির ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয় না। দলগুলোর জমা-খরচের এই হিসাব প্রকাশ না হলে তা নেওয়াটাই অর্থহীন বলে মনে করেন তারা। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইন মেনে তারা জমা দিচ্ছে, প্রকাশ করা বা না করার এখতিয়ার ইসির। অন্যদিকে ইসির ভাষ্য, তারা এই হিসাব প্রকাশের জন্য নিচ্ছে না।

হিসাব দেয়নি অর্ধেক নিবন্ধিত দল : এ বছর ২০২২ সালের অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল জুলাই মাস। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জেপিসহ নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে অর্ধেক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, অন্তত ২০টি দল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে, বাকিরা সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। কোনোটি এক মাস, দেড়-দুই মাস সময়ও চেয়েছে। দলগুলোর আবেদন বিবেচনা করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়ার পক্ষে কমিশনে ফাইল উপস্থাপন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতিবেদন দিতে সময় বাড়বে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।

সর্বশেষ খবর