রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
কষ্টের জীবন - ২

আয়ের অর্ধেকই যায় বাড়ি ভাড়ায়

♦ খরচ বাঁচাতে পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়েছেন অনেকে ♦ ১০০ বর্গফুট ঘরের ভাড়া ৪ হাজার টাকা ♦ এক রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন পাঁচ-ছয়জন

জিন্নাতুন নূর

আয়ের অর্ধেকই যায় বাড়ি ভাড়ায়

শুধু খাওয়ার কষ্ট না, থাকার কষ্টেও দিনাতিপাত করছেন রাজধানীর নিম্নবিত্তরা। আয়ের অর্ধেক টাকাই চলে যাচ্ছে ঘরভাড়ার পেছনে। বস্তি এলাকায় এক রুমে কোনোরকমে গাদাগাদি করে পরিবারের পাঁচ-ছয়জন সদস্য নিয়ে থাকছেন তারা। এর ফলে তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেমন থাকছে না একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও হুমকিতে পড়ছে। আবার নিম্নবিত্তদের কেউ কেউ ঘরভাড়ার অতিরিক্ত খরচ বহন করতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে করোনা অতিমারি শুরুর পর কাজ হারিয়ে অনেকেই উপার্জনের জন্য নিজে ঢাকায় থেকে তার পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দেন। যা অব্যাহত আছে।

‘নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন ও নাগরিক সুবিধাগুলো : প্রেক্ষিত ঢাকা’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা জানান, এক হিসাবে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষ মধ্য আয়ের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়ি ভাড়া দেন। নিম্ন আয়ের ক্ষেত্রে ১০০ বর্গফুট ঘরের প্রতি মাসে ভাড়া পড়ে ৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে মধ্য আয়ের মানুষ ১৫০০ বর্গফুট আয়তনের বাসার ভাড়া দেন ৩০ হাজার টাকা। ঢাকায় দেশের ৬৪ জেলার ২ কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষের নিজস্ব বাড়ি আছে। আর ৯০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বাসা ভাড়া দিয়ে বাস করেন। এর মধ্যে বাসা ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য আছে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের। বাকি ৫০ লাখ মানুষ কোনোমতে জীবনযাপন করেন। তাদের মধ্যে আছে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ, নিম্নআয়ের শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী।

মিরপুর দুয়ারিপাড়া বস্তিতে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে এক রুমের একটি কক্ষে ভাড়া থাকেন গৃহকর্মী রাশিদা আক্তার। সন্তানদের চৌকিতে থাকতে দিয়ে রাশিদা ও তার স্বামী মেঝেতে ঘুমান। এই গৃহকর্মী জানান, স্বামী আগে মাছ বিক্রি করতেন; এখন অসুস্থ। তার মাসিক আয় ৮ হাজার টাকা। ঘরভাড়া দেন ৪ হাজার ৪০০ টাকা। আয়ের অর্ধেকের   বেশি তার ঘরভাড়ার পেছনে ব্যয় হয়। এরপর সংসার চলে ধার দেনায়।

পোশাক শ্রমিক লাইলী বেগম। তিনি একজন অপারেটর। ওভারটাইমসহ লাইলীর বেতন প্রায় ১১ হাজার টাকা। রামপুরার বউবাজারের একটি বস্তির এক রুমে থাকেন মা ও দুই সন্তানকে নিয়ে। চারজনের এই পরিবার চলে লাইলীর একার রোজগারে। ঘরভাড়ার জন্য প্রতি মাসে তাকে গুনতে হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ফলে বেতনের প্রায় অর্ধেক টাকা এই পোশাকশ্রমিকের ঘরভাড়ায় চলে যাচ্ছে। অবশিষ্ট টাকায় সংসার চালাতে গিয়ে লাইলীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মিরপুর-১৪ নম্বরে একটি মেসে থাকেন রাশেদ হাসান। আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারীর কাজ করতেন। করোনায় চাকরি চলে গেলে ঘরভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাঁচাতে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর পাঠিয়ে দেন। এখন ভাড়া চুক্তিতে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করেন। মাস শেষে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা তার আয়। এর মধ্যে বাড়িভাড়ায় তার ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। যৎসামান্য নিজের খাওয়ার খরচ রেখে বাকি টাকা পরিবারের কাছে পাঠান।

সর্বশেষ খবর