রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই যুবকের ওপর বর্বরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর চারঘাটে এক ছাত্রলীগ নেতার হাতে ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দুই যুবক। যাদের একজনকে নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আরেকজনকে প্রথমে মাটিতে পুঁতে এবং পরে হাত-পা বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রেখে নির্যাতন করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ফেনসিডিল বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ শুভ ও তার সহযোগীরা ওই দুই যুবককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে। নির্যাতনের শিকার যুবকরা হলেন- শলুয়া ইউনিয়নের কানাজগাড়ি গ্রামের আবু বক্করের ছেলে নুর মোহাম্মদ পলক (১৮) ও তার খালাতো ভাই একই গ্রামের সৈকত আলীর ছেলে শাকিল রহমান (২০)। তাদের মধ্যে পলককে মাটিতে পুঁতে এবং পরে হাত-পা বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রেখে নির্যাতন করা হয়। আর শাকিলকে চোখ-মুখ বেঁধে পিটিয়ে নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আলাদাভাবে নির্যাতনের সময় তাদের কাছে প্রথমে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে পলক ৪০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল নির্যাতনের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর মধ্যে পলককে পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যায়, একটি পুকুরের হাঁটুপানিতে হাত-পা বেঁধে পলককে ফেলে রাখা হয়েছে। পানির মধ্যে একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা। মাঝে মাঝে চেষ্টা করে মাথা তুলে শ্বাস নিচ্ছে। আর পাশে একজন দাঁড়িয়ে দেখছে এবং আরেকজন স্বীকারোক্তি আদায় করার ভিডিও করছে।

নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেতা আবদুল ওয়াদুদ শুভ শলুয়া গ্রামের সাজেদুর রহমানের ছেলে। তার সহযোগীরা হলেন- শলুয়া গ্রামের সইমুদ্দির ছেলে সাব্বির, আনজু আলীর ছেলে মুক্তা ও রমজান আলীর ছেলে লালন। এরা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলা আছে।

নির্যাতনের শিকার শাকিল রহমান জানান, শলুয়ার কানাজগাড়ি মোড় থেকে পলককে তুলে নিয়ে যায় শুভ ও তার লোকজন। তাকে বামনদীঘি বিলে নিয়ে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে প্রথমে মাটিতে পুঁতে ও পরে পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতন করে। এ সময় তারা পলকের কাছে টাকা নেওয়ার স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করে এবং সেটি তারা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে।

শাকিল আরও বলেন, শুভ তার লোকজন নিয়ে গিয়ে চোদ্দপাই এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন করে বাম হাত ভেঙে দেয়। এরপর ওই অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠায়।

শাকিল বলেন, ‘দুই দিন আগে শুভ ও মুক্তা আমার বাড়িতে এসে তাদের সরবরাহকৃত ফেনসিডিল বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হলে আমাদের এভাবে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার পর আবার রাত ১টার দিকে বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দিয়ে আসে। প্রকাশ করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে আবদুল ওয়াদুদ শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পলক ও শাকিলকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের আমি চিনি না। আপনারা ফোনে কথা না বলে সামনাসামনি এসে কথা বললে ভালো হয়।’

চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম বলেন, মুক্তার, সাব্বির, লালনের বিরুদ্ধে মাদকের ৬-৭টি মামলা আছে। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন জামিনে আছে। নির্যাতনের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর