সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - মোহাম্মদ আলী, এমডি, পূবালী ব্যাংক

বাংলাদেশেও ডিজিটাল ব্যাংক ভালো করবে

শাহেদ আলী ইরশাদ

বাংলাদেশেও ডিজিটাল ব্যাংক ভালো করবে

মোহাম্মদ আলী

বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী বলেছেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক ভালো করবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে ভালো করছে ডিজিটাল ব্যাংক। মোহাম্মদ আলী ২০০৮ সালে মহাব্যবস্থাপক ও চিফ টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে পূবালী ব্যাংকে যোগ দেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ শেষ করা মোহাম্মদ আলী ব্যাংক খাতের সাম্প্রতিক নানা বিষয় ও পূবালী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মানুষকে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ব্যাংক রয়েছে। সারা বিশ্বে ২০ থেকে ২১টি ডিজিটাল ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ১১ থেকে ১২টি ডিজিটাল ব্যাংক এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে। ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ডিজিটাল ব্যাংকে ভালো করছে। বাংলাদেশ যেহেতু ঘনবসতির দেশ, আশা করি এখানেও ডিজিটাল ব্যাংক ভালো করবে। ভালো না করার কারণ নেই। ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে পূবালী ব্যাংকও ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের আবেদন করেছে। তরুণ প্রজন্ম শাখায় গিয়ে সেবা নিতে অভ্যস্ত নয়। তাদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। প্রথমদিকে ডিজিটাল ব্যাংক আমানত সংগ্রহ ও সিএমএসএমই নিয়ে কাজ করবে। তাই প্রচলিত ব্যাংকের খুব একটা সমস্যা হবে না। আমানতের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হবে। কারণ ডিজিটাল ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে কম হবে। ফলে তারা উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। মোহাম্মদ আলী বলেন, ডিজিটাল ব্যাংক মূলত ইন্টারনেট ও মোবাইলভিত্তিক। ডিজিটাল ব্যাংকের সেবাগুলো প্রচলিত ব্যাংকগুলোও দিতে পারত। প্রচলিত ব্যাংকের কাস্টমারদের ব্যাংকে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। আর কোনো গ্রাহক ডিজিটাল ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার সময় জেনে নেবেন তিনি কোনো দিন ব্যাংকের শাখায় যাবেন না। প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহকদের মাইন্ডসেট থাকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং করব আবার শাখায়ও যাব।

তিনি বলেন, পূবালী ব্যাংক দেশের প্রথম বাঙালি ব্যাংক। ১৯৫৯ সালে যাত্রা শুরু করে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নামে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এই ব্যাংকের নাম দেন পূবালী ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকটি ১৯৮৪ সালে বেসরকারিকরণ করা হয়। তখন খেলাপি ঋণ ছিল ৫৪ শতাংশ। ২০০৫ সালে আমরা সমস্যা কাটিয়ে উঠি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক তুলে নেয়। ২০০৮ সালে যোগ দিয়েই আমি কোর ব্যাংকিং সল্যুশন (সিবিএস) স্থাপনের কাজ শুরু করি। ওই বছর ১০ শাখায় সিবিএস স্থাপন সম্পন্ন হয়। ২০১৪ সালের মধ্যে সব শাখা অনলাইনের আওতায় চলে আসে। এর পরই আমরা প্রযুক্তিগত সেবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যেসব গ্রাহক দীর্ঘদিন ধরে পূবালী ব্যাংকের সঙ্গে আছেন তাদের আজীবন সেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি ২০১২ সালে। ব্যাংকাররা যদি আন্তরিকভাবে গ্রাহককে গ্রহণ করেন, সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন, তাহলে এই গ্রাহকরা আমাদের ব্যাংকেই থাকবেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, যেখানেই ব্যাংকের শাখা হোক, সবচেয়ে ভালো মানের ডেকোরেশন করতে পারলে কাস্টমার আসবে। প্রযুক্তিতেও এগিয়ে থাকতে হবে। এ তিনটি জিনিসের সমন্বয় হলেই কাস্টমার আমাদের ব্যাংকে থাকবেন। পূবালী ব্যাংকের এমডি বলেন, ফলে প্রতিটি সূচকে পূবালী ব্যাংকের উন্নতি হয়েছে। ১৯৮৪ সালে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার সম্পদ পরিচালনার জন্য লোকবল ছিল ৯ হাজার। এখন ৭২ হাজার কোটি টাকার সম্পদও দেখভাল করছেন ৯ হাজার কর্মী। প্রযুক্তির কল্যাণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া গত পাঁচ-ছয় বছরে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, এর এক টাকাও এখন পর্যন্ত খেলাপি হয়নি। কারণ ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণে শাখা ও প্রধান কার্যালয় থেকে পরিদর্শন করা হয়। আর ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণে এমডি বা ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান পরিদর্শন করেন। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়ায়। আমরা সব খাতে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। মানুষের মৌলিক চাহিদার জায়গাগুলোতেও ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এর পরও বর্তমান প্রেক্ষাপটে রপ্তানিতে গুরুত্ব দিয়েছি। বেশি রপ্তানি করতে পারলে বেশি ডলার আসবে। তখন আমদানিকারকদের এলসিও খুলতে পারব। মোহাম্মদ আলী বলেন, এখন সময় ডিজিটালের। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলছে। তো আমাদের প্রধান নজর প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমরা শিগগিরই ব্যাপকভাবে ডিজিটাল ব্যাংকিং মার্কেটে প্রবেশ করব। ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি ভার্চুয়াল এফডিআর, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম খোলা যাবে। ঋণ প্রস্তাবগুলোও ভার্চুয়ালি চলে আসবে আমাদের কাছে। ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু আগেই আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে ডিজিটাল ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোনো সমস্যা না হয়। সেই প্রেক্ষাপটেই আমরা এ ধরনের ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগ দিয়েছি। আইসিটি অপারেশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কার্ড বিজনেস ও কার্ড অপারেশন বিভাগ করা হয়েছে। অল্টারনেট ডেলিভারি চ্যানেল ডিভিশন করেছি। কারণ কাস্টমারকে রিটেইল ব্যাংকিং সেবার পাশাপশি করপোরেট ব্যাংকিং সেবাও যেন প্রযুক্তির মাধ্যমে দিতে পারি। তিনি বলেন, ঋণ ও অগ্রিম প্রস্তাব, ঋণপত্র খোলা যাবে করপোরেট অফিস থেকে। এগুলো মনিটরিং করার জন্য একটি ট্রেড সেন্টার করা হবে। তথ্য ঠিক আছে কি না, আন্ডার ইনভয়েসিং ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না। কমপ্লায়েন্স ইস্যুগুলো দেখবে ট্রেড সেন্টার। অনেক ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে রিটেইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। আমরা রিটেইল ও করপোরেট দুই ধরনের সেবাই শাখা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে আমাদের ব্যবসা অনেক বাড়বে। শাখায় তেমন কাজ থাকবে না। মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের ব্যাংকে টাকার কোনো সংকট নেই। আমরা দুই বছরে ১৫১টি উপশাখা খুলেছি। সারা দেশে ৫০০ শাখা রয়েছে। সব শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ভালো আমানত পেয়েছি। অন্যান্য ব্যাংক যখন আমানত হারিয়ে সংকটে, তখন আমাদের আমানত বেড়েছে। ডিসেম্বরে আমানত ছিল ৫১ হাজার কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আমাদের ইসলামী শাখায় আমানত ১ হাজার ৩৫৬ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর