বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

উদ্ধার হেরোইন হয়ে যায় পাউডার!

শেষ পাঁচ চালানের তিনটিতে পাউডার দুটিতে মিলেছে সামান্য পরিমাণ হেরোইন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

উদ্ধার হেরোইন হয়ে যায় পাউডার!

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় জব্দ করা চালানে মিলছে না হেরোইনের অস্তিত্ব! এ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে জব্দ হওয়া শেষ পাঁচ হেরোইনের চালানের তিনটির রাসায়নিক পরীক্ষায় হেরোইনের পরিবর্তে অস্তিত্ব মিলেছে সাধারণ পাউডারের। বাকি দুটি চালানে রাসায়নিক পরীক্ষায় হেরোইনের অস্তিত্ব মিলেছে মাত্র এক শতাংশেরও কম।

মাদকবিরোধী অভিযানে হেরোইনের পরিবর্তে সাধারণ পাউডার মেলায় হতবাক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি বড় হেরোইনের চালান ধরা পড়েছে। হেরোইনের চালান ধরা পড়লেও চট্টগ্রাম বিভাগের কোনো মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গত ছয় মাসে কোনো হেরোইন আসক্ত চিকিৎসা নিতে আসেনি। হেরোইনের চালান ধরা পড়ছে, অথচ নিরাময় কেন্দ্রে কোনো আসক্ত আসছে না- বিষয়টা আমাদের কাছে অবাক লেগেছে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় রাসায়নিক পরীক্ষক আবু হাসান বলেন, ‘গত ছয় মাসে জব্দ করা পাঁচটি হেরোইন চালান পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আসে। পাঁচটি চালানের মধ্যে তিনটিতে হেরোইন বা অন্য কোনো মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি। বাকি দুটিতে সামান্য পরিমাণ হেরোইনের অস্তিত্ব রয়েছে। আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে কোনো আলামতে ১ শতাংশও যদি হেরোইনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তাহলে ওই রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তাই এ দুটি পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রাসায়নিক পরীক্ষার প্রথম ফলাফল নেগেটিভ আসলে দ্বিতীয় দফায় ফের রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষার ফলাফল আসার পর চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।’ জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ জুলাই আকবর শাহ থানাধীন কর্নেলহাট ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সামনের রাস্তা থেকে একটি বাসের ট্রাভেল ব্যাগ থেকে আটটি স্বচ্ছ পলি প্যাকেটের ভিতর থেকে প্রতি প্যাকেটে ১৮০ গ্রাম করে মোট ১ কেজি ৪৫০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তরের উপ-পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় সিএমপির আকবর শাহ থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, বিজিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হেরোইনের চালানটি তিনি জব্দ করেছেন। ৭ জুলাই জব্দ করা হেরোইন রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য বিভাগীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়। দুই দফা রাসায়নিক পরীক্ষা থেকে গত ১২ জুলাই চূড়ান্ত ফলাফল প্রদান করা হয়।’ বিভাগীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ওই ‘ফলাফল’ সংরক্ষিত রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে। ১৪০২/২৩ নম্বর ওই ফলাফলে বলা হয়- ‘ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ ও জ চিহ্নিত আটটি পলি প্যাকেটে প্রাপ্ত যথাক্রমে ০.৯৯৯৭ গ্রাম, ০.৯৯৯৬ গ্রাম, ১.০০১ গ্রাম, ০.১৯৮৯ গ্রাম, ০.৯৯৯৪ গ্রাম, ১.০০২ গ্রাম, ১.০০১ গ্রাম ও ০.৯৯৯৭ গ্রাম বাদামি গুঁড়া পদার্থে হেরোইন বা অন্য কোনো মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি। সিলমোহর অক্ষত ছিল।’ হেরোইন জব্দ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হেরোইন উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। জব্দের পর ডক স্কোয়াড দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। অতঃপর নিয়ম অনুসরণ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রাসায়নিক পরীক্ষার আগে বোঝার সুযোগ থাকে না জব্দ করা চালানে থাকা পদার্থ হেরোইন নাকি পাউডার। এমনও হতে পারে সোর্স কথিত হেরোইনের ভুল তথ্য দিয়ে কৌশলে আসল হেরোইন পাচার করছে।’

সর্বশেষ খবর