বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
গ্রন্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন

বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে ৬০ শতাংশ মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে ৬০ শতাংশ মানুষ

বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে’র জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ক ‘গ্রন্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গতকাল প্রকাশিত ‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে বাংলাদেশে বন্যা মোকাবিলা’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যার দিক থেকে নেদারল্যান্ডস ছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে আর কোনো দেশ এগিয়ে নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বেঙ্গল ডেল্টায় অবস্থিত বাংলাদেশে নিচু ও সমতল ভূমির কারণে বন্যার প্রবণতা বেশি। ফলে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। অতিবৃষ্টি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু কারণে বন্যার এই ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৪৫ শতাংশ মানুষ নদীর পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। বন্যায় প্রতি বছর গড়ে বাংলাদেশের স্থলভাগের ২০-২৫ শতাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়। অন্যদিকে, চরম বন্যার কারণে দেশের ৫৫-৬০ শতাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এতে আর্থিক খরচসহ মানবসম্পদের ক্ষতির সম্ভাবনাও বাড়ছে। অবস্থানগত কারণে এবং নিচু সমতল ভূমির জন্য বাংলাদেশে বন্যার প্রবণতা রয়েছে। গবেষকদের ধারণা, ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতিতে নদী প্রবাহের সর্বোচ্চ মাত্রা গড়ে ৩৬ শতাংশ বাড়তে পারে।

কম-নির্গমন পরিস্থিতিতে ১৯৭১-২০০০ সালের তুলনায় ২০৭০-২০৯৯ সালের মধ্যে সেটি ১৬ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি লো-এমিটিং (কম নির্গমনকারী) দেশ। ২০২১ সালে পৃথিবীতে নির্গত গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্র ০.২৫ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে নির্গত হয়েছে। তবে কৃষি এবং জ্বালানি খাত বেশির ভাগ দেশের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের পেছনে দায়ী। এই দুই খাত থেকে যথাক্রমে ৪৪ শতাংশ ও ৩৯ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ থেকে বন্যার ঝুঁকি সবই নির্ভর করে বৈশ্বিক নির্গমন হারের ওপর। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোর নির্গমন এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বন্যা মোকাবিলার জন্য প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয় বাঁধ নির্মাণকে। মূলত বিভিন্ন জায়গার বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোকে নিরাপদ রাখতেই এই কাঠামোগত ব্যবস্থার ওপর নজর দেওয়া হয়। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই বন্যার ঝুঁকিতে পড়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া সরকারি নীতিমালার কারণেও বন্যার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়েছে। বাংলাদেশে কার্যকর বন্যা ঝুঁকি প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের পথে বাধা হিসেবে রয়েছে দুর্বলতা এবং স্থানীয় চাহিদা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে সক্ষমতার অভাব, প্রশাসনিক সমস্যা। প্রতিবেদনে বন্যা প্রতিরোধের জন্য পরামর্শ হিসেবে বন্যা মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ এবং আরও বেশি সাংগঠনিক অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) মধ্যে আরও ভালো সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্যা ও দুর্যোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে উন্নতি করা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর