বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

জটিল সমীকরণে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থীতে নির্ভার বিএনপি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

জটিল সমীকরণে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থীতে নির্ভার বিএনপি

কৃষিনির্ভর খুলনার রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ আসনে উন্নয়নের আশায় জনগণ কখনো আওয়ামী লীগ কখনো বিএনপি প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা এ অঞ্চলে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০১৮ সালে তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এখানে আবদুস সালাম মুর্শেদী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে সর্বশেষ বিএনপির মনোনয়নে এম নুরুল ইসলাম এ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। তারপর দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও মাঠ ছাড়েনি বিএনপি। এবারের নির্বাচনে খুলনা-৪ আসনে জটিল সমীকরণে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়ন চেয়ে হেভিওয়েট একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। বিপরীতে বিএনপির একক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থিতার বিভেদকে কাজে লাগিয়ে শতভাগ ফায়দা তুলতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের নানা ধরনের ব্যানার-ফেস্টুনে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, অপর যুগ্ম সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত সংসদ সদস্য সুজার ছেলে এস এম খালেদীন রশিদী সুকর্ণ ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ।

পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, জাতীয় পার্টির শাহ হাদিউজ্জামান, খেলাফত মজলিসের সাখাওয়াত হোসাইন, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা কবিরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা ইউনুস আহমাদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের আবদুল হালিম প্রার্থী হতে পারেন।

জেলা আওয়ামী লীগের একসময়ের দাপুটে সাধারণ সম্পাদক সুজার মৃত্যুর পর তৃণমূলের একাধিক নেতা এ আসনে প্রার্থিতা পাওয়ার আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী এবারও দলীয় মনোনয়নের শক্ত দাবিদার। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে আমার আসনে শান্তি বিরাজ করছে। জমি দখল, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেছে। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক জোন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পরিকল্পনা রয়েছে।

মনোনয়ন ঘিরে নতুন মেরুকরণের আশায় সক্রিয় রয়েছেন রাজপথের একাধিক নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর দাবি তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিভিন্ন উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখায় এ এলাকায় তার একচেটিয়া সমর্থন রয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ৩৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজপথের সক্রিয় কর্মী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান জামাল বলেন, দলের সভানেত্রীর নির্দেশে জীবনবাজি রেখে ’৯০ এর এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ওয়ান-ইলেভেন, ক্লিনহার্ট অপারেশন, স্পাইডার ওয়েবের মতো কঠিন সময় দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে থেকেছি, মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাইনি। যারা এখন সুদিনে মনোনয়নপ্রত্যাশী রাজপথে আমার মতো কেউ ত্যাগ স্বীকার করেনি। এর আগে তারা মনোনয়নও চায়নি। আমি এর আগেও তিনবার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার সভানেত্রী তৃণমূলে সক্রিয় সংগ্রামী কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন এটাই আমার বিশ্বাস।

এবার মনোনয়ন তালিকায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তরুণরাও। মহানগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকেই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকার শিক্ষা পেয়েছি। আমি মনে করি মানুষের আস্থার জায়গায় আমি আছি।

সাবেক সংসদ সদস্য সুজার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্বচ্ছ অর্জন ও গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার মানুষের পাশে থাকতে চান তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম খালেদীন রশিদী সুকর্ণ। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যয় নিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে তরুণদের, শিক্ষিত মানুষদের নেতৃত্বের যে সুযোগ দিচ্ছেন, আমি সেভাবেই কাজ করছি। নেত্রী যদি মনে করেন আমাকে মূল্যায়ন করলে দলকে কিছু দিতে পারব, আমি সাধ্যমতো সেই চেষ্টা করব। অন্যদিকে খুলনা-১, ৪ ও ৫ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী। তিনি বলেন, ’৮৬ সাল থেকেই নির্বাচন ও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এ এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আমার বেশি।

জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হলে এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে শুধু এ আসনই নয়, সারা দেশে বিএনপি বিজয়ী হবে। এখানে জনপ্রতিনিধি হতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন, কর্মসংস্থান ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করব।

সর্বশেষ খবর